Search This Blog

Thursday, October 13, 2011

বিশ্বভারতী - নারী বিভাগ

প্রবাসী পত্রিকার আষাঢ়, ১৩৩৯ সংখ্যায় প্রকাশিত

বিশ্বভারতী - নারী বিভাগ
শ্রীআশা দেবী
শান্তিনিকেতনে শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীতে গত কয়েক বৎসর ধরিয়া যে নারী বিভাগ গড়িয়া উঠিতেছে, তাহাতে ছোট ও বড় সকল বয়সের মেয়েদের জন্য একটি সর্ব্বাঙ্গসম্পূর্ণ ও স্বাভাবিক শিক্ষা দিবার আয়োজন আরম্ভ হইয়াছে। ভবিষ্যতে এই সকল শিক্ষার আয়োজনগুলিকে সংহত করিয়া একটি মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনা করিবার সঙ্কল্প প্রতিষ্ঠাতার পনে আছে। কিন্তু যতদিন না তাঁহার এই সঙ্কল্প কার্য্যে পরিণত হয়, ততদিন মেয়েদের নানাদিক হইতে শিক্ষা লাভ করিবার যত উপকরণ ও সুযোগ বিশ্বভারতীতে পাওয়া যায়, ভারতবর্ষের অন্য কোনও নারী-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাহা সম্ভব নয়।

    ১। শিশু বিভাগ - ছয় হইতে বারো বৎসর পর্য্যন্ত বালিকারা শিশু বিভাগে পরিগনিত হইয়া থাকে। নারী-ভবনের একটি বিশেষ অংশে একজন পৃথক মেট্রনের তত্ত্বাবধানে তাহাদের থাকিবার ব্যবস্থা আছে। এই বয়সে তাহাদের বাড়িবার সময় বলিয়া তাহাদের খাদ্য, খেলাধুলা ও স্বাস্থের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়। তাহাদের শিক্ষা যাহাতে কেবল পাঠ্যপুস্তকে আবদ্ধ না থাকে, সেজন্য তাহাদের বহির্জগতের সহিত পরিচয় এবং হাতেকলমে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় - বাংলা, ইংরেজী, অঙ্ক, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি পাঠ্য বিষয় ছাড়া তাহাদের সঙ্গীত, নৃত্য, চিত্রবিদ্যা, কাঠের কাজ, মৃৎ-শিল্প (clay-modelling), সেলাই প্রভৃতির শিক্ষারও ব্যবস্থা আছে।

২। স্কুল ও কলেজ বিভাগ - স্কুল ও কলেজ বিভাগে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাট্রিকুলেশন, ইন্টারমীডিয়েট ও বি-এ পরীক্ষার জন্য ছাত্রীদের প্রস্তুত করা হয়। এই বিভাগের ছাত্রীরা তাহাদের পরীক্ষার পাঠ্য ছাড়া সঙ্গীত, চিত্রকলা, সেলাই, বয়নশিল্প বা অন্য যে কোনও হাতের কাজে শিক্ষা গ্রহণ করিতে ইচ্ছা করেন, তাহার জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ও সুবিধা দেওয়া হয়। মেয়েদের দেখাশোনা করিবার জন্য নারীভবনে একজন মহিলা ওয়ার্ডেন ও একজন মেট্রন থাকেন, কিন্তু তাহাদের জীবন পরিচালনা করিবার ও সকল বিষয়ে নিয়ম রক্ষা করিবার ভার প্রধানতঃ তাহাদের নিজেদেরই হাতে। এইরূপে স্বায়ত্তশাসনের দায়িত্ব গ্রজণ করিয়া, সাধারণ রন্ধনশালার কার্য্যে যথাযোগ্য সাহায্য, শিশুদের সময়ানুসারে দেখাশোনা ও রোগীর সেবা প্রভৃতি কার্য্যভার লইয়া যাহাতে তাহাদের শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়, তাহাই এখানকার শিক্ষাবিধানের উদ্দেশ্য।
যাঁহারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত না হইয়া কেবল সাধারণভাবে শিক্ষা লাভ করিতে ইচ্ছা করেন বা যে বিষয়ে তাঁহাদের বিশেষ অনুরাগ কেবল তাহারই অনুশীলন করিতে ইচ্ছা করেন, তাঁহাদের জন্যও বিশ্বভারতীর নারী-বিভাগে বিশেষ ব্যবস্থা আছে।

৩। কলাভবন - যাঁহাদের কেবলমাত্র সঙ্গীতে বা চিত্রবিদ্যায় অনুরাগ, তাঁহারা বিশ্বভারতীর কলাভবনে ছাত্রী হইতে পারেন। কলাভবনের চিত্রবিভাগের অধ্যক্ষ শ্রীযুক্ত নন্দলাল বসু ও সঙ্গীত বিভাগের অধ্যক্ষ শ্রীযুক্ত দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই বিভাগের ছাত্রীরা যদি তাঁহাদের সাধারণ শিক্ষার জন্য আর কোনও বিভাগে কোনও বিষয়ে পড়িতে ইচ্ছা করেন তাহারও সুযোগ দেওয়া হয়।

৪। বিদ্যাভবন - যাঁহারা কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত না হইয়া বিশেষভাবে কোনও বিষয়ের অধ্যয়ন বা গবেষণা করিতে ইচ্ছা করেন, তাঁহারা বিশ্বভারতীর বিদ্যাভবনের ছাত্রী বলিয়া পরিগনিত হন এবং নির্ব্বাচিত বিষয়ে তাঁহাদের শিক্ষা সমাপ্ত হইলে বিশ্বভারতী হইতে তাঁহাদের যথাযোগ্য উপাধি দেওয়া হয়। বর্ত্তমান বিশ্বভারতীর বিদ্যাভবনে নিম্নলিখিত বিষয়গুলিতে বিশেষভাবে অধ্যয়ন বা গবেষণা করিবার ব্যবস্থা ঁছে ঃ-
(১) সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য, (২) পালি ভাষা ও সাহিত্য, (৩) বাঙ্গালা ভাষা ও সাহিত্য, (৪) হিন্দী ভাষা ও সাহিত্য, (৫) উর্দ্দু, ফার্সী, আরবী, ভাষা ও সাহিত্য, (৬) প্রাচীন ভারতেতিহাস ও কৃষ্টি, (৭) ভারতীয় মধ্যযুগে সাধনার ধারা, (৮) জৈন-দর্শন ও জৈনশাস্ত্র, (৯) ভারতীয় পাশ্চাত্য দর্শন, (১০) শিশু-মনস্তত্ত্ব ও শিশুশিক্ষা।

৫। শিল্প বিভাগ - যাঁহারা সাধারণ শিক্ষার সহিত কোনও হাতের কাজ বা অর্থকর শিল্পে শিক্ষা গ্রহণ করিতে ইচ্ছা করেন, তাঁহারা নিম্নলিখিত যে-কোন শিল্পে শিক্ষা গ্রহণ করিতে পারেন - বয়ন, রঞ্জন, মুদ্রণ, বহি-বাঁধা, গালার কাজ, চামড়ার কাজ, সেলাই, বাতিক-কাজ (batik), কাঠ-খোদাই।

৬। পল্লীসেবা বিভাগ - পাশ্চাত্য দেশে যে সকল মহিলা সমাজের সেবা বা অন্য কোনও জনহিতকর কার্য্য জীবনের ব্রত বলিয়া গ্রহণ করিতে ইচ্ছা করেন, তাঁহারা সেই সেই কার্য্যের জন্য যাহাতে আবশ্যক শিক্ষা লাভ করিতে পারেন, এমন অনেক প্রতীষ্ঠান ইউরোপে ও আমেরিকায় আছে। আমাদের দেশেও বর্ত্তমানে শিক্ষিত মেয়েদের মধ্যে এইরূপ সেবাব্রত গ্রহণ করিবার গভীর ইচ্ছা জাগিয়াছে, কিন্তু সেই ব্রগ্রহণের উপযুক্ত হইবার জন্য যেরূপ শিক্ষার প্রয়োজন সেরূপ শিক্ষা লাভ করিবার সুযোগ এক মহারাষ্ট্র প্রদেৎ ভিন্ন ভারতবর্ষে আর কোথাও নাই। বিশ্বভারতীর অন্তর্ভুক্ত “শ্রীনিকেতনে” পল্লীসেবা ও বিশেষভাবে বাংলার পল্লীগ্রামের নষ্ট স্বাস্থের যে চেষ্টা চলিতেছে সেখানে মেয়েদেরএই শিক্ষা গ্রহণ করিবার ক্ষেত্র প্রস্তুত আছে।
পল্লী বাসী নরনারী বা শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক জীবন, বা আর্থিক অনটন বা যে-কোন একটি সমস্যার সমাধানকে জীবনের ব্রত বলিয়া যে-সকল মেয়েরা গ্রহণ করিতে ইচ্ছা করেন এবং সেজন্য নিজেদের উপযুক্ত করিতে চাহেন তাঁহারা শ্রীনিকেতনের কর্ম্মীদের তত্ত্বাবধানে ও পরিচালনায় গ্রামে গ্রামে যে-সকল অনুষ্ঠান আছে তাহাদের সহিত কাজ করিয়া হাতে কলমে শিক্ষা লাভ করিতে পারেন এবং পল্লীজীবনের সমস্যা লইয়া শ্রীনিকেতনে যে নিয়মিত বক্তৃতা ও আলোচনা হয় তাহাতে যোতদান করিয়া থিওরিটিক্যাল শিক্ষা লাভ করিতেও পারেন। তাঁহাদের থাকিবার ও কাজ করিবার সুবিধার জন্য সম্প্রতি শ্রীনিকেতনে একটি পৃথক ছাত্রীনিবাস স্থাপিত হইয়াছে।
যে শিক্ষা মানব প্রকৃতির কোনও অংশের বিকাশকে খর্ব্ব না করিয়া তাহার সমগ্র বিচিত্রতাকে সহজ ও সম্পূর্ণ ভাবে বিকশিত হইবার সুযোগ দেয়, সেই শিক্ষাই বিশ্বভারতীর আদর্শ ও লক্ষ্য। সেইজন্য বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা শান্তিনিকেতনে ও শ্রীনিকেতনে মেয়েদের শিক্ষার জন্য এমন একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করিতেছেন যেখানে তাহারা তাহাদের বুদ্ধিবৃত্তি, জ্ঞানানুরাগ, সৌন্দর্য্যবোধ, সেবা ও কর্ম্মকুশলতা, সকল দিক হইতে নিজেকে প্রকাশ করিবার ও সৃষ্টি করিবার সুযোগ পাইয়া তাহাদের শিক্ষা সম্পূর্ণ ও সার্থক করিয়া তোলে।
-----------

Thursday, September 29, 2011

Palestine in Bengal

Some years ago, I was taking a train ride in Bengal, going from Kolkata to Bolpur.

In recent years, roads have improved, greatly cutting down driving time between those two cities. Also, cars on rent, including driver, is common these days. So, often end up renting a car while in Bengal. However, this was one of the occasions when I did not have a car. Thinking about it, I would have liked to own a good bicycle while in Santiniketan, which would keep me mobile and healthy. A scooter is also good, but not worth owning it if we only visit once in many years.

Anyhow, this specific time, I was traveling by train - not a bad way to go if you wish to meet up fellow travelers and get their feelings. On this occasion, I had my mother with me, and on the trip she was speaking with another resident of Santiniketan. I was taking pictures out of the window and into the compartment, and listening to the general conversation.

On the other side of the central aisle, there were a few Bengali youths, from suburban Calcutta, who were going a few stops only and not all the way to Bolpur. They were loud in their discussion, but not disrespectful of others. I actually liked some of their topics of discussion, which included state level politics, the so called degradation of the global environment and who was responsible for it. They discussed CPM government. I could guess that the feelings of these youths were no more about blind support of the communist regime, but same time, a lot of apprehension and suspicion of western influence on India and the power of the corporations. They were all worried about getting a job. They did not talk about work ethics, discipline and the virtue of working hard - something that I often felt was an issue that should be addressed. Anyhow, I did smile at some of their comments, and even joined in and offered my comments here and there. I was pleasantly surprised to note that they actually welcomed my participation. Clearly, I did not live in India - they had figured it out and also heard by mother speak about me to her friend. Somehow, my opinion seemed important enough for them.

Their talk moved on to street protests in Calcutta - something to do with rising price of things. They laughed about some of the police being pelted by stones and the police rounding up some innocent bystanders, while some of the real miscreants got away. In the process, the boys described one youngster, who was not present in the train, as a “palestine” boy, in Bengali. I had not come across the term. The boy they were speaking about had a Bengali name, was clearly a boy of the neighborhood, and had no ancestry in Palestine. He was not an Arab nor a Muslim. The term Palestine was not used as a Geographic location. The boy was not called Palestinian. Rather, the term was used as an adjective.

Eventually I figured it out. A ‘palestine’ boy, in Bengali, for these kids, meant a boy that was brave, was daring, stood up for his rights, was not afraid to face up to big opponents. It was an admirable adjective, betting local a local hero.

I found it amusing, and worthy of introspection. Here was a part of the world where folks were not Arab, not Muslim, and far removed from the Arab-Israeli conflict. But, television and international news had brought the world closer to home, and in the process, it was the stone pelting youths of Palestine that these unemployed kids of Bengal identified with.

It was almost like a David and Goliath story, but in reverse. Here David was not a poor Jewish village boy. Instead, it was a poor Palestinian kid, standing up to the Israeli tanks and armored cars. The Israeli army had turned into Goliaths. And the story had permeated through layers of linguistic, ethnic, cultural and civilizational barriers and reach remote corners of Bengal, where a brave boy taking on the state apparatus protesting rising food prices or their inability to get a good job. Identifying with the proverbial David, he begins to identify a brave brothers as ‘palestine’ boy. The exact term used, which kept ringing in my year, was ‘সে ছেলে প্যালেস্টাইন ছেলে’ or, ‘that boy is a palestine boy’.

In a way, David and Goliath had turned Bengali, and Palestine had arrived into the heartland of Bengali street culture.

Today, with the recent application by Palestine to the UN for recognition and statehood, and the intense backdoor horse trading by the US on behalf of Israel to prevent it, was the trigger that tweaked my memory about the incidence on the train in Bengal some years ago. This shows how the US-Israel axis is slowly losing ground on the ground globally - some of it in strange ways, such as these young kids of Kolkata, who find heroism and fighting the justice in the actions of Palestinian youngsters wanting freedom from oppression, and their underdog status naturally attracts sympathy, whereas the Israeli juggernaut and its US ally is considered the Goliaths of today.

Perhaps I should take a few more train journeys this time in India. Another way of keeping in touch with the land.

Wednesday, September 28, 2011

Should I be writing a novel ?

I have thought about it some.
Should I consider writing a novel, or a book or some sort?

I have contemplated writing something, in the form of a book, for some time now. And the idea is not just my own. I have also been told, by a few well wishers and friends, that I might consider putting my thoughts down on paper but in a more organized way, instead of disjointed emails, posts, comments, blogs, podcasts, bulletin board articles and so on. There are enough of them around already.

Apart from that, I also got involved in designing a book of poems by some of us, in Bengali, originally conceptualized to be printed this year 2011 or the next, sort of in celebration of Tagore’s 150th birth anniversary. The poems have nothing directly to do with Tagore. But, indirectly, anybody writing in Bengali, or even thinking in that language, likely borrows something from Tagore, since his contribution to the evolution of the language was so deep. And yes, the book of poems were mostly to be in Bengali, but not exclusively so. As it happens, I myself contributed by far the largest number of poems, which we called ছড়া (Chhorha).

But, designing the book is no mean task, and I have had not much help in it. To me the book should be visually extremely appealing. This means, it should have colors, pictures, sketches as well as text. Also, most of it should be original. So, I used some designs (আলপনা) made by my mother, as well as sketches I myself made of people and things. Even page numbers could not be just plain numbers - they had to be different. But, alas, designing such books take enormous effort and time. So, till now, the book is no more than a quarter ready. Also, I am short of poems. I need a hundred or two more. Friends are not coming forth with much poems any more, and I myself am not a prolific poet as such. So, I am tinkering with idea of augmenting the poems with some writings. In Bengali, in English - whatever. Perhaps even this blog will find itself in the book.

Another thing - who will print it ? I already had an idea that I was not going to go begging publishers. Rather, I would go and print a few copies myself, of high quality print and binding. Within my own capacity, I would print perhaps four or five copies and leave a few with this or that person or organization. That’s it. Being out of circulation, these would likely never gain much circulation or fame - but on the other hand, if they were any good, they’d be a collectors item.

But that’s not the subject of this writing. I am asked by folks to write a novel or a collection of essays and such.
And this blog is about that. The point is - should I ? Can I?

What should I write about ?
I once thought of writing a sort of an autobiographical novel. Or a novel that loosely follows my own lifetime. This should be relatively easy and require less imagination, because it is like writing what I already know happened, more or less, with a bit of tweaking here and there, to turn it into what one hopes would be an interesting story for readers.

But, the story must have a sort of an identifying character or description, or category. Should it be a sort of a romance novel? No way. I know for sure, that I shall never be able to write a good romance, because, well, because I cannot think that way. But, that does not mean there shouldn’t be love or a romantic angle in the story. Everyone, even myself, should be able to handle that.

But then, what should be the category? Autobiography ? Nope. A travel document ? I have been around the world. But, no - I am not ready to write travel documents, though my writing could easily include various locations on the planet.

So, should it be a thriller ? a detective novel ? A murder who-done-it ?
Nahh .. I am not into those, although I have read my share of Agatha Christie.

Historical novel ? Tempting, but I am not qualified enough. I have toyed with the notion of a man from India arriving at the North American shores fifty or a hundred years ago - more like a period novel. This is one option that is worth considering, perhaps. But its sale value is doubtful. But then, I have my own ideas about sale. Future of books and novels are going to be less dependent on Publishing Houses and more on electronic formats, I felt. In other words, books are likely to be bought and sold in electronic format through internet and with more direct involvement of writers and readers. At least this is my gut feeling.

So, Indian boy coming to north America sometime in the last century - this is one theme that might work. May be he kinda falls in love with an Italian emigrant woman that works in a laundry, while a mexican young mother that lost her husband through snakebite sort of likes him. Heck, the story is already getting complicated and turning into a triangle. I wonder if such story lines have any appeal what so ever with the larger readership. Perhaps no.

Perhaps just a quiet brooding kind of person that likes to observe life around himself and either talk to himself, or writes his own diary, or somehow passes on his observations to a writer (me) living a century into the future. How about him standing in line to collect weekly salary in a model T factory run by Henry ford? Or, going further into the past, actually working as a translator between a railway overseer and a bunch of Chinese labor. For this, he would have to know some Cantonese of Mandarin. Actually, I have no idea what language the early Chinese immigrants that worked on the railway system in the US spoke, or where they came from. Perhaps from Hong Kong, since that was a British Colony and connected to the west already. Or am I wrong ? Clearly, I need to do some research into these things. Besides, I know no Chinese at all. So, the Indian boy last century can hardly be expected to speak Chinese, unless he himself was living in Hong Kong for a while. It just so happens that I myself was living in Hong Kong for a while. Is there a sort of a connection ? Could it be that the boy had a wife or a mistress left behind in Hong Kong, a Suzy Wong of his own, that taught him Cantonese ?

Hmm… just talking about plots might be more interesting than actually writing the story.

Anyhow, the man that introspects a lot - well, what does he notice about life around himself ? The gun toting trigger happy Americans of the wild west - they likely had no time for a brown skinned Indian boy - mostly would mistake him for a Mexican. And I knew only a smattering of Spanish, not enough for the hero to pass off as a Mexican. But, perhaps he knew enough to get by, and perhaps that young mother sort of spoke with him in Spanish often enough. Which young mother ? I wrote about her already, the one that kinda liked the Indian boy. Hmm.. this is worth thinking through again.

But, just to make it more intriguing - how about a white skinned girl breaking the race barrier of the time, and offering to run away with him? Heck, there’d likely be a posse headed by the father and the town marshal after him. That might turn the story into some sort of a Luis L’Amour type of western thriller, where the hero ends up finding gold somewhere in Tennessee and befriending some passing Mormons, or Cherokee Indians, or a traveling circus, or whatever, and finds refuge, and ends up making a family with his new Russian wife, only to end up complicating matters because the Siox attack us and run off with the wife - traces of the movie The Little Big Man, while the Cantonese wife ends up somehow traveling to the new world and finding the hero. All hell breaks lose because by then he has a siox squaw too, who is notional about who shares my tepee.

But on the other hand, the hero could spend time wondering. Why did the smoky blue mountains come up ? Why do mountains come up at all? Perhaps he stumbles upon a fossil or two in Montana. Ohh, he gets to Montana somehow. Let us say, he comes across these fossil vertebra without any knowledge of such past creatures. This makes him contemplate. Also, he wonders why some creatures that look like gigantic fish, are to be found on the sides of mountains a thousand mile from the ocean. He gets to wonder if continents have always been the same or if they move about, rise and fall and change with time. Perhaps he even wonders if man came by workmanship of God, or chance evolution. Maybe someone will tell him about Charles Darwin, a white bearded man that looked like Moses, but was, in more ways than one - an anti-Moses. Where the man, coming from India, has a copy of Gita and reads it or not? I suspect not. I also suspect he cannot read Indian languages much, except, er, Bengali ?

But, leaving all that, how about a man that turns and entrepreneur and lives the so called American dream, only to realize, at the end of his life, that it was all quite worthless ? Or, somehow he ends up in the US during the civil rights movement and feels the brunt of racial hatred in the south, or the compassion of the quakers and ends up working in the underground railway.

But, why not be a bit more adventurous and mix him up with an Inuit village somewhere up north just around the Klondike gold rush? Perhaps he became a handler of a bunch of camels someone imported for helping out with the road building into the Canadian rockies - an experiment that backfired because the camels had a bad habit of trying to eat the tents of prospectors and miners, while the horses and donkeys had never seen wooly camels before and went berserk and would run off every tim the camels came into sight. In the middle of all this confusion, the boy would fall for the daughter of the owner of a stable that refused to house the camels. I might have to do some research into the history of the time. I know camels were brought in. Also, one could toss in a hanging or two. There was the famous hangman’s tree in Lillooet. Perhaps the story would describe the area around Lillooet and the Fraser and Thompson rivers and the works of the Canadian pacific railway men.

May be it should not be such a story at all. Let the man come in current times and contemplate sitting at Stanley Park on weekends. Or better still, let it be a set of essays.

Am I capable of writing non fiction essays? About what ? Current affairs? My observation of the world at large? Perhaps essays in English and Bengali ?
In a way, this is itself is an essay about writing.

Well, instead of writing a book, I might just continue to write about writing a book. How about that ?

A sense of unease

Yesterday was not much different from any other.
Yet, it was depressing.

It has not been easy for me to pinpoint a singular reason for the depression, mild as it was. The day itself started normal, meaning getting up when the alarm rang, and spending time at the sink, trying to clean my gums, which were having more than normal infection at the roots of my teeth. This was making more than one a bit loose. Perhaps in the next few months, a few would need to be pulled.

The girl at the Dentist that told me to care for his gums, was a pretty immigrant from Ukraine. She had married a French Canadian, and settled in Western Canada. She had a good memory for faces. She remembered that she had treated cleaned my teeth at the Dentist a year ago. I could not remember her name or her face, though that was partially because they cover their face in a medical mask when they work. Still, I had felt sort of sorry that I did not remember her. She had sparkling blue eyes, and spoke about the transformation taking place in Eastern Europe, when I asked about it.

I had washed my mouth and checked for traces of blood, especially after cleaning the gums at the root of teeth. Irene, the dental assistant, had asked me to shoot for gradual improvement of the gum infection situation, so that less of the roots would bleed when I poked at them. I was sort of happy to note that only two of them bled a little, unlike four a few days ago. A good sign.

The day itself was clear and sunny, unlike the previous day. It rains more than it snows in winter, if you are in the lower mainlands south of Vancouver. This is one reason the climate in British Columbia is milder than in the rest of Canada. It has something to do with the Rocky mountains and the warm ocean air that comes off the Pacific ocean but is trapped by the Rockies. This moisture laden warm air ends up increasing precipitation in British Columbia and preventing it getting too cold. So, it rains more than it snows, out here . I could draw a vague similarity with the Indian monsoon, which was also a product of warm and moist air off the Indian ocean being trapped by the Himalayas. Different continent, different season and different direction of the air current, but there were similarities in heavy rainfall.

But, rainy days in winter is not the most comfortable to drive through. I would prefer it to heavy snowfall to drive through. Nonetheless, the traffic slows down. The fog effect keeps clouding the windscreen, the side and rear windows and mirrors. Visibility reduces, and traffic slows down. Those who are in a hurry, this is a cause for frustration, and perhaps a few accidents - which further slows the traffic.

But for those that have learned be philosophical about it - this is an opportunity for introspection, or catching up. Catching up with what ? For me, this is the time to catch up with the world. In particular, catching up with world news. Over the years, our method of gathering news has evolved. In my school days in Santiniketan, we had a radio. There was just one of two state controlled radio channels, called Akashvani. And we could hear news a few times a day. The word Akashvani literally meant - message from the sky. Was the news any good? I do not remember, but suspect it must not have been very exciting, since I do not seem to remember every being too eager to listen to it.

I remember my now departed father talking about listening to news during the second world war. He was in his early twenties at the time. In Santiniketan, someone had a Radio. About once a month or so, folks were invited to congregate in some place, where this Radio was rigged up for everyone to listen to the news - mainly war news and what Hitler was up to and what the Allied powers were doing.

Anyhow, we did not get daily newspapers those days. My uncles, who lived about mile away, got one daily newspaper in Bengali - Ananda Bazar Patrika. It arrived by train from Calcutta and was delivered in the afternoon. I remember glancing at it time to time, especially if there was news of a cricket match. The person that usually read the entire paper from end to end, was my grand mother.

By the time I was in college in Bombay, transistor radios were common. TV was still boring and black and white. English newspapers were more common in the college hostel. But, I did not have any habit of reading news with any seriously. I did by then have a few pen friends - all girls and all living outside India. The letters were interesting - but did not really count as channels for exchange of news. One of them was a French girl that lived in Paris - but, I never got around to learning much about France, in the few years when I exchanged a few letters with her. But, I do remember Rober Kennedy being shot and eventually dying from that in a hospital. I was shocked.

During my working life, I had a rather fancy Sony Digital Radio that had programmable channels that could be set to BBC news or Voice of America or Soviet News of All India Radio etc. I used to work on a ship as an engineer, and usually used that small radio to listen to world news through short wave. As far as I can see, my gathering of world news really took off during that phase.

Later on, when I lived in Hong Kong or USA, the TV replaced the radio - but somehow, the quality of news delivered and received, deteriorated. I remember being frustrated at the hours and hours of news coverage on TV on a single subject - OJ Simpson and if he did or did not murder his ex wife. That literally turned me off TV for good, and I have never recovered from it. But by then, internet was looming large, and proved to be among the best sources for news man could imagine.

As news channels got consolidated and concentrated in a few hands, so did independent sources proliferate. It was cheap to put up things on the internet, and citizen reporting got off the ground. I was hooked.

Then Apple went and invented the iPod, and the internet invented the Podcast. The world was no more the same. The sources of information through audio podcasts, and iPods ability to automatically synchronize and download new information and its ability to hold vast amount of such information, to be played and listened to later - literally changed my way of gathering information. I hooked the iPod to the car music system, and would listen to news, while stuck in traffic in pouring rain on the way to work.

It was all those things that eventually prompted me to learn to make my own podcasts, but thats another story.
Meanwhile, yesterday, I was listening to BBC, and also to KCRW’s left, right and centre podcast. I also listened to Amy Goodman speaking about Palestine looking for statehood at the UN general assembly.

Through all this I was vaguely disappointed at the lack of options on the podcast channels to get some high quality news and analysis about India and China, either in Bengali or English. These two countries where, along with Brazil, South Africa and Russia, the new emerging nations and getting increasingly important for all sorts of reasons. But news and analysis about them was still doled out from western sources. I had learned enough by them to identify these sources as biased and incomplete, and should be augmented by more local sources from these regions. Unfortunately there did not seem to be many that rose above r e the trivial level.

Anyhow, that was not reason enough for a mild depression at the end of the day. Over the years, I had gotten increasingly occupied in my idle times about my state of affairs - rather, it was about the state of the country, the economy, the civilization and indeed, of the planet. I have a mild suspicion that the depression, mild and in the background, is somehow rooted into a sense that all is not well with what man has done with himself and the atmosphere around him. Its a mild foreboding that the future is worse than the past.

Since there is nothing much I could do about it, and since this was essentially a global issue, and since I was not the savior of the world, I should have been above it all. But somehow, I suspect, I was not above it.

Anyhow, a single lunch break is likely not enough to cover the state of the Universe, or why one might develop nagging doubts about things.
So I shall end this one by a simple - cheers and take care.

Tuesday, September 13, 2011

A changing world


A month has past since I last posted here.
I had written about the gap analysis between the Governor’s HLC report on Visva Bharati / Santiniketan and what we think today as necessary steps.
The world, meanwhile, is a month older, and so are we. What has changed ?


Well, for one thing, I had made a trip to Guangzhou province of China to inspect and take part in the sea trial of a newly build ship, which is being readied for delivery.

Other than that, there is a newly formed NGO, which is not yet registered, where I am part of the group that founded it. The name of the group is Vancouver Tagore Society or VTS. I have to get used to that abbreviation. Anyhow, the main idea was Duke’s. He got involved with another established NGO, named World Poetry Reading, regarding celebration of Rabindranath Tagore’s 150th birth anniversary. The upshot of that collaboration was a day long event on the 10th of September, at Richmond cultural centre, performed by a varied group of people, towards RNT150 (an abbreviation of Rabindranath Tagore’s 150th anniversary). And I had agreed to make one presentation - Tagore’s efforts at Rural Reconstruction as a basic step in nation building.
There are others that also contributed. But, from my perspective, this is perhaps the second time I came on stage to present anything relating to Tagore before a crowd. In 2008 December I had presented a ten minute piece on how Santiniketan, and Tagore’s ideas, had influenced my thought process and personality. That was presented at a function called ‘শান্তিনিকেতনের সেকাল ও একাল’ or - Santiniketan, past and present, staged at Natyaghar, the main hall in Visva Bharati University in Santiniketan.

I met Pushpa Jain at the RNT150 at Richmond Cultural Centre. She did her PhD in maths in 1997/98 in Santiniketan, taught maths in Simon Fraser University in Vancouver and took early retirement due blood cancer.
But apart from me, Richmond Cultural Centre, VTS, and RNT150, what else has been happening in the recent months? Visva-Bharati is waiting for a new vice chancellor. We were hoping that Piyali Palit or Udaya Narayan Singh might be selected. But the politicians manipulate these things - so the person selected might turn out to be very different.
For one thing - the global economic allergy is still persisting. The more I think about it, and read about it, and I have been doing so for over a few decades now, I feel more convinced that there is no real solution to ensure further sustained grown, globally speaking, and the reason is that we, mankind, have over-extended ourselves. Believing that we are the chosen species by God and therefore have a license to kill the planet, have proceeded to do just that. So, in the largest perspective, the current civilization is unsustainable. Mankind will either learn to reverse its damaging trends on its own wisdom, or it will be forced to do so. But before any such corrective measures take place, the planet will be much worsened, and a lot more of the ecosystem, flora and fauna will disappear.
Even vultures are going extinct in India an surrounding countries. In the 1990s the vulture population, Griffon cultures and oriental white backed vultures, started dying off at alarming rates, over 40% every year. Some of these species, especially the white backed, has now lost 99.99% of its original population and can be considered as good as extinct.


Why ? Apparently a cattle painkiller drug called diclofenac is the culprit. It stays in dead cows and vultures that eat these carcasses have rapid failure of their livers. The drug has been banned in 2006 but is still widely available. There are frantic efforts ongoing to save the species by various means. The latest report is that the efforts are not succeeding much. The rate of their population decline is faster than any known bird species, including the famous dodo that went extinct around the 17th century through man’s intervention.

Vultures play a very important role in the south Asian ecosystem. The goings on is an example among many others, showing the disastrous effects of human technology or its false promises, on the future of the living planet.
So, what else has happened? US military is still in Iraq and Afghanistan. Obama appears a good talker but not much else. Jack Lytton died of cancer. Steve Jobs is suffering from Pancreatic cancer and gave up his post at Apple. Japan is reeling under multiple bad news - Tsunami followed by failure of the nuclear power plants at Fukushima followed by leaks of radiation. This came at the end of a decade long recession and a major mental depression of the nation.
Binayak Sen was given bail by the Supreme Court of India. Julian Assange remains in house arrest in the UK.


Worlds oceans have been overfished by industrial nations to such an extent that major depletion of fish population is affecting the ecosystem and animals as well as men have to adjust to it. The Sea Lions and Seals are re-adjusting their food habits and hunting grounds, apart from experiencing decline in population. Toothed whales are fairing no better, including the famous killer whales. On the human side, a lot of coastal fishermen communities are devastated, and some have turned criminal - example the rising piracy off the Somali coast. While there is a lot of talk on eradicating, or controlling this newfound piracy - no politician is willing to talk of the underlying problem - overfishing.

The arctic ice sheet is melting away ever faster. The Canadian north is opening up. Global warming will make more species go extinct and more low lying lands go under water.
Turkey got angry at Israel for killing a number of Turks in an attack on an aid flotilla for Palestine and then refusing to apologize for it. Its Prime Minsiter is the new hero for the middle class Arabs, while embarrassing the Arab leaders and alarming the Israeli and Amaricans.
Nato pounded Lybia and helped force a change of regime. No idea what the new regime will compose of. Ruper Murdock got into hot water over embarrassing leaks of illegal activity of its British media company News of the World. There was a Royal Wedding in London, which most of us were unaware of and did not watch.
The proposed oil pipeline project from Alberta to Texas is drawing protest. Naomi Klien of Canada was arrested, among many others, sitting in to protest it in the US. Dalai Lama has joined the protesters.
The Arab Spring turned out to be less than a watershed event. We knew nothing much about Tunisia before the spring, and know as less about it after the spring. Egypt tossed out Mubarak, but the Army is in power and not the people nor democracy. Lybia is still in turmoil and Assad is still in power in Syria. Saudi Arabia is still a monarchy, as is many other smaller nations there.
Meanwhile, democracy has been overblown and as far as India and many other nations are concerned, is compromised and degraded through corruption.
The biggest hero to emerge out of it all, in my book, is Anna Hazare and his team. Time will tell how it turns out.
Stone age India is another piece of news that got my attention. There is not enough room to write about it properly here. Suffice it to say, the hominid species that migrated out of Africa and inhabited various regions of the world say 80,000 years ago are known in Europe and the middle east - but not much was known of them in India. That is now changing due to archaeological excavation works in Andhra Pradesh last century and a fresh effort now. Also, the story is linked with the Toba explosion, 74,000 years ago, when an Indonesian Island erupted in a major volcanic event. Indian subcontinent got covered in several inches of ash and the sulfurous particles in the atmosphere prevented sunlight from warming the earth. The eruption blanketed sunlight for years. Some climatologists claim that the planet got into a thousand year long cold snap as a result of that eruption. 99 percent of modern humans perished at the time, along with many other species.


Somehow, India played a crucial role and the excavations in Billa Surgam Caves of Andhra Pradesh is proving to be crucial. If I get to India, I intend to see if there is any chance of me visiting that site.

A Burmese elephant is being treated by a veteranarian. It wandered into Thailand and stepped on a land mine and injured itself. Another bizarre news in Thailand is that a tourist park in Pattaya region was flooded during high waters, and a large number of crocodiles escaped. Now the park authorities are frantically searching for them.
Floods and resultant outbreaks of decease has again ravaged North Korea, which reportedly faces a new bout of starvation and food crisis.
Many news papers and nature magazines are putting up colorful pictures of Corals and Coral reefs - because such reefs are suspected to go completely extinct as the first entire ecosystem to vanish due to man’s activity.

Well, thats all I could write up before feeling sleepy. I might add to these later on.

Tonu

Thursday, August 11, 2011

HLC REPORT’এর ফাঁক বিশ্লেষণ

বিশ্বভারতীকে ঠিক পথে ঘোরানোর যদি প্রয়োনীয়তা থাকে আজও, তবে কি করে তা করা যায় তা চিন্তা করতে গিয়ে যে কয়টা প্রধান কথা মনে আসে তা হল উপাচার্য যে মানুষই হন, এবং তাঁর ইচ্ছা যাই থাকুক, তার হাতে যদি ঠিক ঠিক যন্ত্র বা অস্ত্র না দেওয়া হয়, তাহলে তার ঠিক ঠিক ভাবে পরিবরতন আনা হয়তো অসম্ভব হবে। অথচ, সেরকম যন্ত্র হয়তো প্রশাসনের হাতে তোলা যাবেনা যতক্ষন সংসদের বিশ্ব-ভারতীকে নিয়ে যে আইন করা হয়েছে, তার সংশোধন হয়। সুতরাং - এই সংশোধনে কি কি সংযোজন থাকা উচিত, আর কি কি দূরকরণ - তা খুঁতিয়ে দেখা দরকার এবং দিল্লীকে আবেদন করা দরকার, হয়তো কলকাতায় মমতাকেও। তার প্রথম পদ হিসেবে Visva-Bharati act’টা আবার পড়তে শুরু করেছি, এবং ভাবছি লীনা দির সঙ্গে বসে একটা খসড়া তৈরি করবো, ইংরিজিতে এবং বাংলাতে - দিল্লী কলকাতাকে ভবিস্যতে ঠেলা দেবার উপলক্ষে।
Parliament act পড়া ও সংশোধন করার ব্যাপারে কোনই অভিজ্ঞতা নেই - কিন্তু একজন আছেন জিনি এসব কাজে অভিজ্ঞ এবং একাজে হাত মেলাতে রাজি - লীনা চ্যাটার্জী।  তাঁর সঙ্গে বসে অগাস্টের আট তারিখ মাঝ রাতে, বিশ্ব-ভারতী act নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করদ হল কিছুটা। তার সঙ্গে amendment গুলোও দেখা হল, পড়া হল আবার করে HLC রিপোর্টের পনেরটি সুপারিশ। সতি্য কথা বলতে হ’লে, সেই তালিকাটি খুব ভাল ও উপযুক্ত মনে হয়েছিল যখন প্রথমবার পড়েছিলাম বেশ কিছু বছর আগে। শ্রী গোপাল গান্ধী তান লী দাকে সেই বইটির একটি কপি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু, এই কয় বছরে শান্তিনিকেতন তথা বিশ্ব-ভারতী সম্পর্কে আমার ধারনা পাল্টেছে, জ্ঞান বেড়েছে, নানা লোকের, দপ্তরের ও বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ হ’য়েছে ও মতবিনিময় হয়েছে। সুতরাং বর্তমান পটভূমিতে - সেই পনের দফার সুপারিশ মনে হয় যথেষ্ঠ নয়। অনেক দরকারি কথা বাদ পড়েছে এবং কিছু মামুলি ব‍্যাপারকে প্রাধান‍্য দেওয়া হয়েছে হয়তো।
এখন আমারা কি কি করা উচিত বোধ করি, এবং তার কি কি গত রাজ্যপালের পনের দফা সুপারিশে শামিল, এবং কি কি বাদ পড়েছে এবং অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, তার ফাঁক বিশ্লেষণ করা হয়তো প্রয়োজন। তার জন্যই এই লেখাটি তৈরি। ইংরিজিতে এই ধরণের প্রচেষ্টাকে কেউ কেউ Gap Analysis বলেন। তারই সরাসরি অনুবাদ করে আমি ফাঁক বিশ্লেষণ কথাটি ব্যবহার করি এখানে।
রাজ্যপালের সুপারিশ তালিকা ধরেই বিশ্লেষণ শুরু করছি।

পরিবেশ
১. বিশ্বভারতী সংরক্ষণ সমিতি গঠন করা, যাতে উপাচার্য নেতৃত্ব দেবেন এবং যাতে SSDA’র প্রতিনিধিরা থাকবেন। তাতে উপাচার্যর নেতৃত্য থাকা উচিত। এই সমিতির কাজ হবে বিশ্বভারতীর জমির মালিকানা বিষয়ক সব কাগজপত্র দেখা এবং বিশ্বভারতীর প্রাপ্য জমির সীমানির্দেশ করা।
এই কাজ কতদূর এগিয়েছে জানা নেই। বর্তমানে SSDA জীবিত না মৃত তাও জানা নেই। এই রিপোর্ট লেখা হয় যখন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় SSDA’এর নেতা ছিলেন। বিষয় টা গুরুত্বপূর্ণ, এবং এর সমাধান নিয়ে মতানৈক্য আছে। আজ যে বিশ্বভারতীর চারিদিকে দেয়াল উঠানো হয়েছে তা নাকি HLC রিপোর্ট অনুযায়ী। অথচ রিপোর্টে দেয়াল তোলার উল্লেখ নেই। শুধু তাই নয়, প্রাচীরবেষ্টিত বিশ্বভারতী এবং রবীন্দ্রনাথের চিন্তা পরস্পরবিরোধী। বিশ্বভারতীর জমির সীমিকরণ ও রক্ষা এরকম চরম চক্ষুশূল বিশ্রী শহুরে কদর্যতা  ছাড়াই সৌন্দর্যবোধবিশিষ্ট প্রকারে মুক্ত দিগন্তকে অবরুদ্ধ না করেই করা যেত এবং তাই করা উচিত ছিল। মনে হয় রিপোর্টকে অপব্যবহার করা, বা তার থেকে অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করার কামনা বিশ্ববিদ‍্যালয়ে বর্তমান।

২. উত্তরায়নকে ঐতিহ্যময় ঘোষণা করা হোক এবং সাংস্কৃতিক মন্ত্রীত্যের অধীনে আনা হোক। 
মনে হয় এটা হয়ে গেছে। তাতে বাড়িগুলির রক্ষণাবেক্ষণ হয়তো ভাল করে হবে। বাকি কি উন্নতি হয় তা দেখার ইচ্ছে রইল।

৩. হাইকোর্ট বা সুপ্রীমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতিকে নিয়োগ করা উচিত বিশ্বভারতীর জমি যদি বেআইনীভাবে যদি চুরি বা বাজেয়াপ্ত করা হয়ে থাকে, তা দেখতে ও প্রতিকারে রপ্ত হতে।
এই কাজটি করা হয়েছে কিনা জানি না। কেউ কি বলতে পারেন ?

৪. এক আন্তর্জাতিক মানের বাসস্থান তৈরি করা হোক আমন্ত্রিত বিদ্বান ও পণ্ডিতদের জন্য।
এই যুক্তিটা পুরোপুরি মানতে পারলাম না। যেই বিখ্যাত গবেষকরা পেরু বা সাইবেরিয়া কি সাহারাতে গিয়ে ভাল কাজ করতে যান, তাঁরা কখনই ওখানে গিয়ে ওয়াল্ডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া বা তার মত পাঁচ তারকার (five star) হোটেল আসা করবে না। যা আসা করবেন তা বিশ্বভারতীতে বস্তুগত ভাবে আছে, হয়তো ছোটখাটো উন্নতি দরকার তাতে। যেখানে গন্ডগোল এবং ভীষণ ভাবে যা লক্ষিত হয়েছে, তা হল অমানুষিক অবহেলা, অতিথি অবমাননা, এবং  অতিথিযালার পরিচ্ছন্নতা, শুচিতা রক্ষার প্রতি চুড়ান্ত অমনযোগিতা। বিশ্বভারতী কি করে অতিথি সেবা করতে হয়, কি করে আগন্তুকদের বরণ করতে হয়, সাদর অভ্যর্থনা করতে হয়, কিকরে তাদের থাকাকে আনন্দদায়ক মনোরম করতে হয় - তা ভুলে গেছে। যারা অতিথিশালায় চাকরি করে তারা মাইনে নেয় নিশ্চই, কিন্তু অতিথি আপ্পায়ন কি বস্তু তা জানেই না। তারা ঘরগুলিকে পরিস্কার ছিমছাম রাখা তো দূরের কথা, জঘন্য অবস্থাশ রাখে। ঘরে ঝুল আর মাকড়সার জাল, বিছানার চাদর ছয় মাসে পাল্টানো হয়নি, তাতে ছোপ ছোপ দাগ। ঘরে গন্ধ। চানের ঘর তকতকে পরিস্কার নয়। দরজা জানলা ভাল করে বন্ধ হয়না, খোলে না। Internet’এর ব‍্যবস্থা নেই কিম্বা থাকলেও তার তত্বাবধানের কাজ যাদের তাদের দরকারে পাওয়া যায়না। সারা বাসস্থানে একটা নিদারুন অবহেলা ও অবক্ষয়ের ছাপ। রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা খুবই খারাপ, কারও মাথা ব্যাথা নেই রোজ দেখে যাওয়ার, গাফিলতি ঠিক করার বা কারোর ভুল শোধরাবার। বিশ্বভারতীকে আন্তর্জাতিক বাসস্থান দেবার কোনও দরকার নেই এখন।  দরকার তার নানা রকম গেস্ট হাউসগুলির সব রকম উন্নতি করা, তাদের মার্জিত করা, ছিমছাম পরিষ্কার করা এবং অতিথিদের সুবিধা অসুবিধার দিকে এখনের চেয়ে একশো গুন বেশি নজর দিতে শেখা। বিশ্বভারতীর ঘাটতি টি hardware’এ নয়, software’এ।
সত‍্য কথা বলতে গেলে - সারা বিশ্ববিদ‍্যালয়ে software’এ গোলমাল - virus infected।

৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগগুলিতে নিজ নিজ সংরক্ষণের জন্য বিশেষ কর্মচারী নিযুক্ত করা হবে এবং তাদের পর্যাপ্ত পরিকাঠানো ও সাহায্য দেওয়া হবে যারা বর্জিতাংশ ও জঞ্জাল বিনস্ত করবে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে।
এখানেও আমি মনে প্রাণে এই সুপারিশকে মানতে পারলাম না। বিশ্বভারতীর লোকেরা গোপাল গান্ধিকে তাঁদের মত জানিয়েছে এবং তার মধ্যে দেখতে পাই লোকেদের চিরাচরিত চাহিদা - আরও দাও, আরও দাও। যেহেতু অবর্জনা দূর করা হচ্ছেনা ঠিক করে, সুতরাং সব বিভাগে অরও পাঁচটা করে লোক রাখা হোক যারা আবর্জনা কি করে দূর করা যায় দেখবে। এটা হল শুধু আরও লোকের চাকরি বাড়ানোর ধান্ধা, সরকারের কাছ থেকে কিছু কাজ না করে আরও আদায় করার ফন্দি, কাজ সমাধান করার নয়। অবর্জনা দূর করা, প্রকৃতিকে রক্ষা ও পালন করা সবার সন্মিলিত কাজ হওয়া উচিত, এবং এটা তাদের শিক্ষার অন্যতম প্রধান অঙ্গ হওয়া দরকার। এর মধে‍্য আবার বাঙালি মধ‍্যবিত্ত মনবৃত্তি দেখা যায় - নিজে কিছু কাজের হাত লাগাবো না - দরকার হলে আরও চাকর বাকর রাখা হোক - তারা কাজ করবে। এক কথায়, বিভাগ গুলির উচিত তারা আবর্জনা দূরিকরণও করবে এবং আরও লোক না নিয়েই করবে। এমনিতেই ওখানে চাকুরেরা গিজগিজ করছে কাজ না করেই।

৬. বৈদ্যশালা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার সর্বাঙ্গিক উন্নতিসাধন দরকার।
এই সুপারিশ গুলি দেখলে হাসিও পায়, কষ্টও হয়। সব কিছুই সরকারের কাছে দাবি, অথচ স্থানীয় লোকেরা কিছুই করবে না, শুধু সরকারী টাকার অপচয় করবে। চিকিৎসালয়ের এমন দূরবস্থা কেন ? টাকার অভাবে না ফাঁকিবাজ সরকারি টাকা অপচয় করার লোকের প্রাধান্য হেতু ? হাসপাতালের উন্নতি না করতে পারলে ওখানের কর্মচারিদের ইস্তফা দিয়ে এমন লোকদের রাখা হোক যারা কাজ করতে জানে।

বিদ্যালয় সংক্রান্ত
৭. বিশ্বভারতীকে এমন সাহায্য করা দরকার যাতে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের সুবিধা বা সুযোগ সে পায়। কিন্তু একই সঙ্গে  একে রক্ষা করা প্রয়োজন গতানুগতিকতা, আঞ্চলিকতা, এত্যাদি থেকে, এবং পণ্ডিত নেহরুর চিন্তানুযায়ী বিশ্বভারতীর নিত্যনৈমিত্তিক ও ধারাবাহিক ক্ষয় থেকে।
বিশ্বভারতীর সাহায্যার্থে এখন দরকার downsizing, এবং অকাজের লোকদের সরানোর। এটাই প্রধান কাজ।

৮ ছাত্র ভরতি করার পদ্ধতিকে স্বচ্ছ করতে হবে।
এ বিষয়ে যা শুনেছি তা হল নিজেদের লোকেদের ঢোকানো হয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও অন্যান্য বিছার এড়িয়ে। এটা বন্ধ করার জন্য বলিষ্ঠ পদ নেওয়া প্রয়োজন।

৯ আসেপাসে আরও কেন্দ্রীয় ও নবদয় বিদ্যালয় খোলা দরকার স্থানীয় ছেলেদের জন্য যারা বাড়িতে থেকে আবাসিক ছাত্র হিসেবে শিক্ষালাভ করতে ইচ্ছুক। একই ভাবে রাজ্য সরকারের প্রয়োজন এই অঞ্চলে রাজ্য সরকার চালিত কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষায়তনের জাল প্রসারিত করা স্থানীয় চাহিদা মেটাতে। এই দুই প্রথাতে বিশ্বভারতী নিজ পাঠশালা ও মহাবিদ্যালয়ের সংখ্যার নিয়ন্ত্রণের অসাধ্য বৃদ্ধি থেকে রক্ষা পাবে এবং একই সঙ্গে স্থানীয় নাগরিকদের শিক্ষালাভের অধিকারও পূরণ হবে।
এই কাজ খুব দরকার এবং তাড়াতাড়ি দরকার - এই নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে আবেদন করা উচিত।

১০ বর্তমান অনার্স ও মাস্টার্স মাত্রার শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়াও, পাঁচ বছরের সংহত পাঠব্য্বস্থা ও বিষয়ের পরিকল্পনা করা দরকার। বিশ্ব-ভারতীর আরও নতুন বিষয়ে দক্ষ অধ্যাপক ও পণ্ডিতদের আনা উচিত যারা নতুন কাঠামো শিক্ষার কাঠামে তৈরি করবে শান্তিনিকেতনে।
এই বিষয়ে কিছু বলার নেই।
শ্রীনিকেতন
১১‍. শ্রীনিকেতন যেন আসেপাসের গ্রামাঞ্চলের মানুষদের সঙ্গে উদ্ভাবক ও প্রগতিশীল আদান-প্রদানের এক যথার্থ মাধ্যম হয়, এবং সেই মাধ্যম অনুযায়ী শ্রীনিকেতন পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলির উন্নয়ন ও অগ্রগতির সহায়ক হয়।
এই বিষয়ে এত কম লেখা হয়েছে, যেন অনুচিন্তনের প্রতীক - নেহাতই লিখতে হবে তাই লেখা। শ্রীনিকেতনের কার্যকলাপ বিশ্বভারতী স্থাপনের এক প্রধান কারণ। তার সঙ্গে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকেদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকা ছিল রবীন্দ্রনাথের অভিপ্রায় এবং তার পেছনে এক বৃহত সামাজিক কারণ আছে, আছে ছাত্রদের চরিত্রগঠনমূলক অভিপ্রায়। শ্রীনিকেতনের উন্নয়নের আবশ্যকতার সঙ্গে বিশ্বভারতীর কর্তব্য ওতপ্রত ভাবে জড়িত, এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের সঙ্গে শ্রীনিকেতনের কর্তব্য তেমনিই ওতপ্রত ভাবে জড়িত।

১২. শ্রীনিকেতনের কৃষিবিদ্যালয় যেন কৃষি শাস্ত্রে দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষানুষ্ঠানগুলির অন্্যতম হয়।
এই সুপারিশ কি wish list না উপদেশ, না সরকারের কাছে আবেদন, না নিজেদের কাজ করা হয়নি তার স্বীকৃতি? কৃষিশাত্রে বা যে কোনো বিষয়ে শিক্ষার মান কতটা উঁচুতে উঠবে, না নিচুতে থাকবে, তার দায়িত্ব বিশ্বভারতীর হওয়া উচিত, সরকারের নয়। কৃষি বিদ্যার মান - অন্যান্য সব বিদ্যার মতই, নির্ভর করবে তাঁর শিক্ষক ও প্রশাসকদের চেষ্টা, নিষ্ঠা, গবেষণার ওপর।  এমন যেন না হয় যে এই সুপারিশের তালিকা ব্যবহার করা হোক এমন ভাবে যে বিশ্বভারতীর উন্নতি নামে শুধু সরকারের কাছে দাবিই থাকবে, কিন্তু লোকেদের নিষ্ঠা ও কাজের দায়িত্বর উল্লেখ থাকবে না।

প্রশাসন ও আর্থিক শৃঙ্খলা

১৩. বিশ্বভারতী কার্যক্রমে আবৃত্ত আয়ব্যয়ককের শতকরা কুড়ি ভাগ অর্থ ব্যয় করার চেষ্টা করবে বিশ্বভারতী উন্নয়নতালিকার কাঝ এগোতে।
একটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন - শতকরা কুড়ি ভাগ না দশ ভাগ খরচ করা হবে উন্নতিকরণের পেছনে তার ওপর অধিক গুরুত্ব না দিয়ে দেওয়া উচিত অর্থ যেন অপচয় না করা হয়, চুরি না করা হয়, এবং উন্নতির নামে বিকৃত যুক্তি দেখিয়ে ভুল কাজে বা ভুল ভাবে অর্থের অপচয় না হয়।

১৪. একটি নতুন পোস্ট, Pro-Vice Chancellor’এর তৈরি করে উপযুক্ত ব্যক্তিকে ভার দেওয়া হোক।
এটা করা হয়ে গেছে।

১৫. Proctor’এর দপ্তর আবার সক্রিয় করা উচিত।
এই ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই, বক্তব্যও নেই।
-------------------------------------------------------------

এরই সঙ্গে হয়তো দরকার বিশ্বভারতীর মূল কর্তব্যগুলি পরিষ্কার ভাবে হেঁয়ালি ছাড়া লেখা যায় কিনা তার চেষ্টা করতে। লীনাদির মনে হয় ভারতবর্ষের সাংবিধানিক intellectual property rights’এর ওপর যে সুন্দর ধারা  আছে, যা লীনা দির মনে হয় হয়তো পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠের অন্যতম। যদি তা ব্যবহার করা যায় তবে হয়তো সেই ব্যবস্থা অনুযায়ী বিশ্ব-ভারতীর জীবন্ত dynamic সৃষ্টি বিশ্ব-ভারতী শিক্ষানুষ্ঠানও তাঁর intellectual property’র মধ্যে পড়ে।  এই বিষয়ে খুঁতিয়ে দেখার সময় এসেছে। সেই property right আজ exercise করা যায় কিনা দেখা দরকার। লীনা দির ধারনা যায়।
বিশ্বভারতী act ১৯৫১ সালের এবং তার ১০৬০, ১৯৭১ ও ১৯৮৪’এর amendment’ও দেখা হয়েছে। চিন্তা করা হ’ল কি করা যায় এখানে, নাগরিক হিসেবে বা প্রাক্তনী হিসেবে। এই act’কে সংশোধন করা, বা বাতিল করা, বা এতে আরও কিছু দফা যুক্ত করা। নতুন দফা যদি যুক্ত করতে হয়, তবে তার পাঠ বা লিপি কি হবে, কে লিখবে?
ভাবলাম আমাদেরই উচিত এটা লেখা এবং সরকারের দৃষ্ঠি আকর্ষণ করা। শুধু বসে বসে অন্য লোককে নিন্দা না করে, নিজের ক্ষমতা ও বিচার অনুযায়ী, নিঃস্বার্থ ভাবে, যা সম্ভব তাই করা।
কিন্তু, ওপরের পনের টা সুপারিশ বার বার পড়ে, এবং চিন্তা করে, মনের মধ্যে একটা খটকা লাগছে - এই তালিকাটি সম্পূর্ণ নয় বলে। এই তালিকাতে যা আছে এবং যেমন ভাবে তা স্ফুরিত বা ব্যক্ত, তাতে মনে হয় অনেক দরকারি যুক্তি না বলা থেকে গেছে।
সুতরাং, HLC রিপোর্টের সুপারিশ তালিকার ওপর আমার মন্তব্য ছাড়াও, কতগুলি অত্যাবশ্যক যুক্তি ও বিচারও আলাদা করে লেখা প্রয়োজন মনে করি, এবং সেটা এই ব্লগের শেষে লিখবো আসচে দিন কয়েকের মধ্যে।
শুরুতেই যা লেখা দরকার তা হ’ল, বিশ্বভারতীর মূল লক্ষ ও উদ্দেশ্যর সংক্ষিপ্ত তালিকা। বিশ্বভারতী কেন করা হয়েছিল এবং তার মূল কর্তব্য কি - সেটা মনে হয় অনেকের মনেই হেঁয়ালি আছে। আমি আমার বুদ্ধি অনুযায়ী বিশ্বভারতীর কর্মতালিকাতে তিনটি পদ লিখেছিলাম। তান লী দা তাতে একটি আরও যোগ করেন, চার নম্বর।
সেগুলো এবং তারই সঙ্গে আমাদের সুপারিশ, বিশ্বভারতী ও রবীন্দ্রশিক্ষা চিন্তা রক্ষা করার ও তার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও লিখবো এখানে - একে একে।
আপনাদের বক্তব্য শোনার ইচ্ছে রইল। লিখতে অনুরোধ জানাচ্ছি এই ব্লগের তলায়। আমায় যদি email  করতে চান - tonu@me.com



এবার HLC রিপোর্ট ছেড়ে - লিখছি বিশ্বভারতীর পরিচয়, এবং কর্তব্য কি হওয়া উচিত, সে বিষযে আমার মত।

বিশ্বভারতীর পরিচয়
বিশ্বভারতী এমন একটি শিক্ষাকেন্দ্র যেখানে ছাত্র, শিক্ষক, বাসিন্দা ও পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চলের লোকেরা একে অন্যের জীবন সম্পর্কে সচেতন ও তাদের সুখদুঃখের  অংশীদার হবেন, এবং সন্মিলিত ভাবে সমাজকে অগ্রসর করার দায়িত্ব শিখবেন, এবং তারই সঙ্গে নিজেদের পেশা, জীবিকা, কারুশিল্প, শিক্ষার উন্নতিসাধনে রত হবে।

বিশ্বভারতীর কর্তব্য
  1. এক - বিশ্বভারতী দেশের সবধারার সংস্কৃতিকে গবেষণা করে জাতির গূঢ জীবনীশ্রোতকে জানার ব্যবস্থা করবে। তার জন্য বৈদিক, পৌরানিক, বৌদ্ধ, জৈন, মুসলমান প্রভৃতি ধর্মচিন্তা এবং তার সঙ্গে আদিবাসী জীবনচিন্তা গবেষণা করে তাদের সমস্ত সত্বার সন্মিলনে সারা ভারতবর্ষের প্রাণের ধারা কোন দিকে প্রবাহিত হচ্ছে তা জানবে, এবং সেই ভাবে নানা বিভাগ ও বৈচিত্রের মধ্যে দেশের ও সমাজের সমগ্রতা উপলব্ধি করায় ব্রত হবে - সেই শিক্ষায় বিশ্বভারতীর ছাত্ররা দেশকে সম্পূর্ণরুপে জানতে, বুঝতে শিখবে এবং সেই সমাজবিজ্ঞানের পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য অর্জিত বিদ্যা কিভাবে দেশ ও সমাজের উন্নতির জন্য প্রয়োগ করা যায় যাথাযত ভাবতে পারবে।
  2. দুই - নতুন বিদ্যা উৎপাদন হবে বিশ্বভারতীর মুখ্য বা প্রধান কর্তব্য।  সে শিক্ষা দান করা বা হবে দ্বিতীয় পর্য়ায়ভুক্ত, বা গৌন, কর্তব্য। বিশ্বভারতী তেমন মনীষীদের আকর্ষণ করবে, আহ্বান করবে, যারা নিজেদের সাধনা, প্রভা দ্বারা নতুন বিদ্যার অনুসন্ধান ও আবিষ্কারের কাজে নিযুক্ত ও নিবিষ্ট আছেন। এরকম মনীষীদের বিশ্বভারতীতে একত্র করে এমন পরিবেশ গঠন করা হবে যা স্বভাবতই নতুন জ্ঞানের উৎস হবে এবং তার দ্বারা প্রভাবিত বিশ্ববিদ্যালয় শেখা বিদ্যার ওপর নব্য দর্শন, আবিষ্কার ও চেতনাকে সংযুক্ত করে দেশের জ্ঞানভাণ্ডারকে ক্রমাগত সমৃদ্ধ করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন দিগন্তের নতুন যুগের উপযোগী নতুন শাস্ত্র তৈরির কাজে সর্বদা নিযুক্ত রাখবে। এরই পরের বৃহত ধাপ হ’ল শুধু দেশেরই নয়, সারা প্রাচ‍্যের ও প্রাশ্চাতে‍্যর, তথা সমগ্র পৃথিবীর মানবচেতনার মূল উৎস সন্ধানের গবেষণায় রত হবে, ঠিক ঠিক মনীষীদের আকর্ষণ করার চেষ্টায় বিশ্বভারতী ব্রত থাকবে এবং এমন পরিবেশের সৃষ্টি ও রক্ষণ করবে যাতে আশ্রম যেন এক জগতব‍্যাপ্ত চুম্বকের ন‍্যায় সমস্ত পৃথিবীর নববিদ্যাসৃষ্টির অন্যতম কেন্দ্র ও তীর্থস্থান হয়।
  3. তিন - বিশ্বভারতীতে গঠিত ও বণ্টিত বিদ্যা এমন যেন না হয় যে তা বিদেশে অর্জিত বিদ্যার বিকৃত অনুলিপি মাত্র এবং শুধুই মধ্যবিত্ত সমাজের কেরানিগিরির উপযোগী মুখস্ত শিক্ষা। এই বিদ্যালয়ে আবিষ্কৃত বিদ্যা এমন হবে যা সরাসরি আসেপাশের গ্রামাঞ্চলের লোকেদের ও প্রকৃতির মান উন্নয়নের সহায় হবে। এইরুপ বিদ্যা আবিষ্কার হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম মুখ্য কর্তব্য। এরই সঙ্গে, মধ্যবিত্ত ও উচ্চ শ্রেনীর ভদ্রলোক ও ধনীদের ভেতর যে নিচু জাতির বা গরিব ও দুর্বল জাতিদের প্রতি  ঘোর অবজ্ঞা আছে, তা মন থেকে ও জীবন থেকে  দূরীকরণ হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম লক্ষ, এবং এই প্রতিষ্ঠানের সবাই যেন নিজেদের জীবনের উদাহরণ স্বরুপ বহির্জগতের লোকেদের প্রভাবিত করাবে। এই বিদ‍্যালাভে ছাত্ররা যেন দেশকে ভালবাসতে শেখে এবং দেশের মঙ্গলে কাজে নামতে শেখে। দেশ থেকে দলে দলে পালিয়ে অন‍্যরাজে‍্য আশ্রয়ার্থী হয়ে দিন কাটানোর প্রচেষ্টাই যেন এই শিক্ষার মূল প্রযোজ্য পরিনাম না হয়।
  4. নাচ, গান, চিত্রকলা ও এইপ্রকার নানান সৃজনীশক্তি প্রকাশের রাস্তা খোলা রাখা বিদ্যালয়ের অন্যতম কর্তব্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূুল কর্তব্যগুলির বিকাশ ও সাধন উপলক্ষে নানান সাংসকৃতিক অনুষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে - তাকে বজায় রাখতে এই গান, নাচ, চিত্রকলার উতকৃষ্ট ব্যাবহার করা হবে - এবং এই অনুষ্ঠানগুলিকে শুধুমাত্র প্রমোদানুষ্ঠান হিসেবে অভিব্যক্ত না করে, সমাজে তার প্রয়োজনীয়তা কি, তার উপলব্ধি ও প্রচার হবে অন্যতম মূুল লক্ষ। এই জন্য এই সব অনুষ্ঠানে সারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণের প্রয়োজন। শ্রীনিকেতনের অনুষ্ঠান যদি শুধু শ্রীনিকেতনের লোকেরাই করে এবং বাকিরা যদি তা দেখতেও না যায়, বা তাতে অংশগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ না করে - যদি সেটা নেহাতই একটি ছুটির দিন মাত্র হয়, বা বড়জোর কয়েক ঘণ্টার নাচ গানের জলসা হিসেভে ধরা হয়, যা সহরের মঞ্চের বদলে গ্রামের মুক্তাঙ্গনে পেশ করা হচ্ছে - তাহলে সে অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। নৃত্য, গীত, চিত্রকলা যে শুধু শেখানোই হবে তা নয় - এই কলাশাস্ত্র আঠা স্বরুপ সারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র, শিক্ষক কর্মচারি, সব বিভাগকে একত্র রাখবে ও একে অন্যের কাজে সহায়তা করতে শেখাবে।
এই ভাবে বিশ্বভারতীর আদর্শ রক্ষা করা যায়, এবং এই ছোট তালিকা বিশ্বভারতীর সংক্ষিপ্ত পথনির্দেশক সূত্র হতে পারে





লিখেছিনু রামহনু নামতনু

Thursday, August 4, 2011

রবীন্দ্রনাথের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সমিতি চেষ্টার বিফলতা জন্য আমরা দায়ী


বৃহস্পতিবার, আগস্ট মাসের চার তারিখ, সাল ২০১১
কালীমোহনের কাজের কথা লিখতে গিয়ে ঘুরে ঘুরে চিন্তা ফিরে আসছে কেন রবীন্দ্রনাথের সমাজ প্রতিকার ও দেশোন্নতির প্রধান চেষ্টা সংশ্লিষ্ঠ বড় বড় কাজগুলি ব্যর্থ হয়।  পেশাদারী ইতিবৃত্তকাররা, যারা Historian নামে আজ স্বীকৃতি পান, তাঁরা লিখবেন রবীন্দ্রনাথ কি বৃহৎ কর্মযোজ্ঞে নেমেছিলেন, শিলাইদহ, পতিসর এবং পরে শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতনে, এই নিয়ে। অনেক লেখা হয়েছে, আরও অবশ‍্যই হবে। তার জন্য আমার মত আনাড়ি লেখকের দরকার করবে না। কিন্তু যা সম্বন্ধে হয়তো যথেষ্ট লেখা হয়নি, সেটা হল রবীন্দ্রনাথের ঔসব যুগান্তকারী অভিপ্রায় ও প্রচেষ্টা যে শান্তিনিকেতনে বিফল হয়েছে তার যথার্থ স্বীকৃতি এবং কেন বিফল হয়েছে তার সমীকরণ।
তাই, পণ্ডিতদের হাতে ইতিহাস ছেড়ে দিয়ে, ভাবছি নিজেদের চরিত্রগত ন্যুনতা, যা মনে করি এই অসাফল্যে প্রধান কারণ, তা নিয়ে আরও তদন্ত ও লেখা। একশো বছর ধরে জত্ন করে আমরা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গান ও নাটক করেছি, বক্তৃতা দিয়েছি, রচনা লিখেছি, নানা যায়গায় আমাদের উচ্চমানের সাংস্কৃতিক চেতনার প্রদর্শনী করে হাততালি কুড়িয়েছি এবং দুটো পয়সা করেছি সুযোগ মত - এবং মনে করেছি আমরা হলাম শান্তিনিকেতনের সার্থক স্নাতক। সেই আমরাই সবচেয়ে বেশি দায়ী রবীন্দ্র-প্রকল্প ব‍্যর্থতার জন‍্য।
দায়ী আমরা সবাই, বাংলা সমাজ এবং ভারতবর্ষ। কিন্তু তাদের সবার মধ্যে সর্বাধিক দায়ী হলেন তাঁরা, যাঁরা রবীন্দ্রনাথকে পড়াশোনা করেছেন, জানবার সুযোগ পেয়েছেন, এবং তাঁরই করা শান্তিনিকেতনের ছত্রছায়ায় বড় হয়েছেন বা চাকুরি জীবন কাটিয়েছেন।
আমার চিন্তা রবীন্দ্রনাথ, কালীমোহন, এলমহার্স্টকে ছেড়ে এই রবীন্দ্রচেষ্টার অপহন্তাদলের ওপর, যাঁরা রবীন্দ্রনাথ বেচে খাওয়া পেশা হিসেবে নিয়েছেন অথচ সেই রবীন্দ্রনাথেরই প্রচেষ্টাকে অপমান করে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কর্মযোজ্ঞে জল ঢেলে তাঁর মাথার ঘাম পায়ে ফেলা চেষ্টা ও সব নিজস্ব পুঁজি ঢেলে দিয়ে তৈরি বাগানকে মরুভুমিতে পরিনত করে চার দিকে বক্তৃতা দিয়ে বেড়িয়ে নাম কিনে বেড়াচ্ছেন।
আমার মনে হয় আমাদের এই সভ্যতা-ধ্বংসক অক্ষমতা ও অযত্নের বিশ্লেষণ করে বেশ কয়েকটা মহাভারত রামায়ন লেখা যায়। আমি বাল্মীকি নই, কৃত্তিবাসও নই। তা হলেও, মনে করি এবিষয়ে চিন্তা করার দরকার আছে, সত্যকে স্বীকার করলে তবেই তার থেকে এগিয়ে যাওয়া যায় এবং ত্রুটি স্বীকার করলে তবেই তার সংশোধন সম্ভব হয়। সত্যকে কবর দিয়ে কৃত্রিম রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে আর টেলিভিশনে দেখাবার জন্য মাঠে ভুয়ো ‘খোল দ্বার খোল’ যাত্রা সহকারে সস্তা নাটক করা যায় - কিন্তু তাতে রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন বৃথা হয়।
কালীমোহন ঘোষ সম্বন্ধে লিখবো ভাবছিলাম - কারণ অনেকে বলছেন। তারই মধ্যে আমাকে আসচে মাসের  World Poetry Reading দলের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের পল্লী উন্নয়নচেষ্টা সম্বন্ধে একটা বলতে হবে। এই সব নানা কারণে আমি নানা বই আবার ঘাঁটতে শুরু করি। যেমন, ধরুন - 
  1. শ্রেয়সী পত্রিকার ৭ই পৌষ ১৩৯৭, ৭ম সংখ্যা। তার সামনের পৃষ্ঠাতে মার নিজের হাতে লেখা - “তনুকে - মা। আমার বাবা কেমন ছিলেন সেটা আমি লিখেছি এখানে। তোদের জ্ঞাত করার জন্য পাঠালাম - ১.১.৯১।” বিষয় সূচীর প্রথম প্রবন্ধই হল “পিতা কালীমোহন ঘোষ”, লিখেছেন শ্রীমতি সুজাতা মিত্র। এছাড়া আছে বেশ কিছু বই ও পত্রিকা যেমন - 
  2. Centenary Volume - L.K. Elmhirst, Edited by Manjula Bose.
  3. Rural Reconstruction and Rabindranath, by Chittabrata Palit, Manimanjari Mitra, Keya Bannerjee
  4. রবীন্দ্রনাথের লেখা প্রবন্ধ - শিক্ষার হেরফের, শিক্ষাসমস্যা, জাতীয় বিদ্যালয়
  5. Introduction to Tagore, by Visva-Bharati, 1982, যাতে রবীন্দ্রনাথের স্বরচিত অনেক লেখা আছে, যেমন,‘Education for rural India’, কিন্তু ইংরিজিতে, এবং শেষের দিকে আছে একটি প্রবন্ধ -  Santiniketan and Sriniketan, লিখেছেন উমা দাসগুপ্তা।
  6. Rabindranath Tagore, a Biography - Oxford University Press লিখেছেন উমা দাসগুপ্তা।
  7. Tagore (Oxford India Series) - লিখেছেন উমা দাসগুপ্তা।
  8. Rabindranath Tagore - my life in my words - লিখেছেন উমা দাসগুপ্তা।
  9. রবীন্দ্রনাথের নিজের লেখা The religion of man
  10. রবীন্দ্রনাথের নিজের লেখা Sadhana, the Realization of life
  11. Asian Ideas of East and West - Tagore and his critics in Japan, China and India - লিখেছেন Stephen Hay.
  12. প্রশান্তকুমার পালের নয় খণ্ড রবিজীবনী
  13. Andrew Robinson ও Krishna Dutta’এর লেখা Rabindranath Tagore, The Myriad Minded Man
  14. Visva-Bharati News’এর কিছু কপি।
  15. Imperfect Encounter - Mary Lago’র লেখা
  16. তপতি দাসগুপ্তার লেখা - Social Thoughts of Rabindranath Tagore
  17. Edward Thomson’এর Rabindranath Tagore : His Life and Work
  18. অরুণ মজুমদারের লেখা - রবীন্দ্রনাঘ ও বাঙালি মধ্যবিত্ত মন
  19. ডঃ সাইফুদ্দিন চৌধুরির লেখা - পতিসরে রবীন্দ্রনাথ
  20. সুতপা ভট্টাচার্যের রবীন্দ্র-সাহিত্যে নারীমুক্তি ভাবনার ওপর লেখা - সে নহি নহি
  21.  -----  ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

উল্টে পাল্টে দেখার সময় মনে হয় - দূর ছাই, সবাই তো প্রচুর লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে। কিন্তু তাঁর প্রচেষ্টা যে আমাদের অপদার্থতার কারণে ব্যর্থ হচ্ছে সেটা তো দেখছি অধিকাংশ ক্ষেত্রে লেখক লেখিকাদের বক্তব্যের বাইরে! এমনকি, এক সূত্রের সন্ধানে’র প্রথম খণ্ডটা আবার নেড়ে চেড়ে দেখছিলাম - অন্নদাশঙ্কর রায়, তান লী দা, আমার মা, লীনা দি, ভেল্টু দা, সত্যজিত রায়, রামাচন্দ্রন, মিষ্টুনি দি, উমা দাসগুপ্তা, অমর্ত্য সেন প্রমুখের কত লেখা। লেখাগুলো যত পড়ছি আবার করে, আমার মনের ধারনাটা ততই দৃড় হচ্ছে আমার কি বিষয়ে লেখা উচিত সেই নিয়ে। 
শেষে তান লী দাকে ফোন করলাম। লীনা দি রবীন্দ্রনাথের নারীমুক্তি নিয়ে লিখবেন ও পড়বেন World Poetry Reading’এ। তাই নিয়ে জোর পড়াশোনা চলছে। তারই মধ্যে তাঁদর বাড়িতে এখন অতিথি আসবেন কিছুদিন থাকার জন্য নানা দূর শহর থেকে। তান লী দা’ও রবীন্দ্রনাথের ছোট্ট পরিচিতি লিখে ফেলেছেন - কিন্তু পরের লেখাটা - ওনার Universalism নিয়ে একটু চিন্তিত আছেন। আমি তান লী দাকে সতর্ক করেছিলাম যে রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞরা এই একটা ব্যাপারে পরিষ্কার ভাবে ব্যাখ্যা করার বদলে প্রায়ই অস্পষ্ট হেঁয়ালির মত অনেক কিছু বলেন যাতে শ্রোতাদের মনে ধাঁধা থেকে যায় এই নিয়ে। আমার অনুরোধ ছিল তিনি যেন এইটার ধাঁধাটা শ্রোতাদের মনথেকে কাটিয়ে দেন। কথাটা মনে হয় তান লী দার মনে ধরেছে, এবং এই নিয়ে নানা বই পত্র ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করেছেন।
তান লী দা আবার এক সূত্রের সন্ধানে বইটির দ্বিতীয় খণ্ড বার পরতে চান এবং আমাকে বলেছেন একটা লেখা দিতে। আজ তান লী দাকে বললুম যে এবার মনের মধ্যে এক বক্তব্যটি পাকা হচ্ছে - কিন্তু সেটা কিঞ্চিত বিতর্কমূলক হতে পারে - যাকে ইংরেজা বলে controversial । রবীব্দ্রনাথ বা শান্তিনিকেতনের স্মৃতিচারণ না করে, আমি লিখতে চাই আমাদের - মানে রবীন্দ্রনাথের পরের প্রজন্মগুলির শান্তিনিকেতনবাসীদের সর্বনাশা ব্যর্থতা,। আমরা রবীন্দ্রনাথের দেশোন্নতির ও সমাজোন্নতির বৃহত কাজগুলিকে চোখের সামনে অবহেলা করে বন্ধ হতে দিয়েছি। এই অপরাধী বোধটা আমার শেষ বয়সে এসেছে, এর আগে ভাবিইনি। কিন্তু এখন যতই ভাবছি, ততই মনে হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজগুলি তাঁর লিখিত রচনার বাইরে - এবং সেই কাজগুলি এতদিনেও অসম্পূর্ণ থেকে গেছে।সে কাজগুলোতে পুনরূজ্জীবন আনা প্রয়োজন। আমাদের অনাদরে যে শ্রোত মরুভুমিতে শুকিয়ে গেছে, তাতে আবার শ্রোত আনতে গেলে প্রথমে শ্বীকার করা দরকার যে আমরা রবীন্দ্রনাথের সত্যিকারের উত্কৃষ্ট কাজগুলোতে সাহায্য করিনি, এগিয়ে আসিনি, এবং এতে আমরা দেশের, দশের ক্ষতি করেছি। একবার গাফিলতি শ্বীকার করলে, হয়তো বা তার সুরাহাও করা সম্ভব হবে এক দিন।
মজার ব্যাপার এই যে, রবীন্দ্রনাথ যেসব কাজ নিযেই সম্পূর্ণ করে গেছেন, সেগুলি হল তাঁর সৃজনী সাহিত্য - গদ্য, পদ্য, নৃত্যনাট্য ইত্যাদি। সেগুলির সম্পূর্ণতা গুরুদেবের নিজের ক্ষমতার মধ্যে ছিল তাই নিজেই সেগুলি শেষ করে গেছেন - শুধু তার অধিকারকভাগদেয়, বা royalty, তিনি নিজের বাড়ির লোকদের না দিয়ে বিশ্ব-ভারতীকে দিয়ে জান। এর পর থেকে বিশ্ব-ভারতী সেই সব গান, নাটকের পুনরাবৃত্তি করেছে, এবং ধীরে ধীরে তার বহিরাগত জাঁকজমক বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা হারিয়েছে, এবং কেন এই গান, নাচ, নাটক, অনুষ্ঠান তৈরি করা হয়েছিল তা ভুলেছে।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রচেষ্টা তাঁর লিপিবধ্য স্থির, নিশ্চল সাহিত্য নয়, যার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ, প্রগতিশীল, চিরগতিশীল, জীবন্ত সৃষ্টি ছিল আমাদের দুর্ভাগা দেশের মলিনতা দূর করার কাজে নামা। দেশের ও সমাজের দারিদ্র, জাতি ও গোষ্টীগত অন্যায়, হীনমন্যতা ও চারিত্রিক ক্ষুদ্রতা ও আত্মপরতা - এইগুলোর মূল কারণ খোঁজা এবং তাদের নির্মূল করা। কিন্তু সেকাজ একদিনের নয় - একজন লোকেরও নয়। সেকাজ চিরকালের, এবং সবার একত্র হয়ে করার। তিনি আশা করেছিলেন যে দেশবাসীর সবাইকে যদি একথা সেখানো না যায়, অন্ততঃ বিশ্ব-ভারতীর শিক্ষক, কর্মী, ছাত্ররা সে শিক্ষা পাবে এবং আসেপাসের কিছু গ্রামে অন্ততঃ প্রগতির হাওয়া বইবে, যা হয়তো বা ভবিস্যতকালে ছড়াতে পারবে আরও বৃহত পরিমণ্ডলে।
রবীন্দ্রনাথ দেখেছেন বাঙালি সহুরে মধ্যবিত্তদের গ্রামবাসীদের নিচুপদে ভাবা এবং জাতিগত ঔদ্ধত্ববোধ, চেষ্টা করেছেন তা থেকে শান্তিনিকেতনের লোকদের মুক্ত রাখতে এবং হতাশা প্রকাশ করেছেন নানা লেখায়। তিনি স্নাতকদের কাছ থেকে কি আশা করেছেন তা লিখেও গেছেন। অথচ, সেই নিয়ে প্রাক্তনীদের বিশেষ মাথাব্যথা দেখিনি। রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ফলদায়ক, উত্পাদনক্ষম প্রচেষ্টা যা সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সবার হাতলাগানো সামাজিক  কর্মসূচী হওয়া  উচিত ছিল, তাকে আমরা বিনষ্ট করেছি। এখানে আমাদের নিজেকে কাজ করতে হবে, ছোটলোকদের সঙ্গে মিশতে হবে, অন্যের সুবিধার জন্য স্রম দিতে হবে, এবং তা আমরা করতে এখনও রাজি না, দেশের জন্যই করতে রাজি না, রবীন্দ্রনাথের জন্য কেন করব?
এই চিন্তার ভিত্তিতে লিখবো ভাবছি।
তনু