জুলাইয়ের ৩০, ২০১১
শুনছি বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য চলে গেছেন তাঁর চুক্তিমূলক পাঁচ বছররের শেষে। আমরা কি কিছু বৃদ্ধিমূলক কাজে নতুন প্রশাসনের সঙ্গে হাত মেলাতে পারি? শুনেছি নতুন উপাচার্য নির্বাচনের কাজ অনেক এগিয়েছে - এবং পদপ্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা বানিয়ে নির্বাচন সমিতি নাকি তা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছে আজ শনিবারের দিন। খোশখবর ছড়াচ্ছে লোকের মুখে ও কিছু দৈনিক কাগজের মুখরোচক চুটকি রচনাতে। শুনছি তিন ব্যক্তির নাম নাকি সেই তালিকাভুক্ত - শ্রী উদয়নারায়ন বাবু, শ্রীমতি পিয়ালি পালিত, এবং শ্রীমতি সুরভী বন্দোপাধ্যায়।
যতদিন নতুন উপাচার্য ঘোষণা না হচ্ছে, ততদিন নাকি উদয়নারায়ন বাবুর ওপর সরকার ভার দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর। ভাবছি, নতুন প্রশাসনের সঙ্গে নতুনভাবে কি শুভকাজে হাত মেলানোর এবং মতবিনিময় করার জন্য এক পক্ষপাতশূন্য সমতল স্থান তৈরি করার আবশ্যকতা এবং সম্ভাবনা আছে কিনা।
শ্রীমতি বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ নেই, কিন্ত বাকি দুজনের সঙ্গেই আলাপ আছে। তাঁরা দুজনেই আমাদের ধারণায় খুবই কাজের লোক এবং শান্তিনিকেতনের জন্য উপযুক্ত হবেন। এখন প্রশ্ন হ’ল, আমরা যারা শান্তিনিকেতনকে দূর থেকে দেখছি এবং রবীন্দ্রনাথের প্রচেষ্টার কালোপযোগিতায় বিশ্বাস করি, যাঁরা নিজেদের সামর্থ মত শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতনকে আমাদের শ্রমদান করতে সম্মত এবং অনুরাগী ছিলাম, যারা বিশ্বভারতীর উপকার করতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে নিযেদের গুটিয়ে নিয়েছি, তাদের কথা কি এই নতুন সহস্রাব্দের নতুন পরিবেশে শোনার মত কারুর সময় বা কৌতূহল থাকবে?
আমার ধারণা - থাকবে। তা ছাড়া Confucius তো বলেই গেছেন - সমস্ত কিছুই পাল্টাবে - পরিবর্তনই জগতের একমাত্র অপরিবর্তনীয় তত্ত্ব এবং তথ্য। তাছারা গুরুদেব’ও Confucius থেকে কম যান না - পরিবর্তন আসুক কি না আসুক, বলেছেন - যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।
যাই হোক, আমরা যদি আহ্বান জানাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন পরিচালকগোষ্ঠীকে আলোচনায় বসতে, এবং তাঁরা যদি রাজি হয়ে যান, তবে সেখান থেকে এগোবার জন্য পরের পদক্ষেপের তালিকাতে কি থাকা উচিত?
মনে যেমন আসছে, লিখছি ঃ
- প্রথম কাজ হবে প্রাথমিক আলোচনায় বসা, কি কি বিষয়ে আমাদের বলার এবং জানার ইচ্ছে আছে তা প্রকাশ করার, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু প্রত্যাশা আছে কিনা আমাদেরকে বলার, অনুরোধ করার, আমাদের কাছ থেকে জানার বা আমাদের জানানোর, তার খবর নেওয়া। তারই সঙ্গে এবং তার থেকেই বেরিয়ে আসা উচিত ভবিস্যতের আলোচনা আরও প্রসঙ্গবিষয়ক ভাবে করার কর্মসূচি।
- আমাদের মধ্যে কে কে আলোচনায় বসতে রাজি, কাকে ডাকা উচিত, ইত্যাদি ঠিক করা একটা ব়হত কাজ, কিন্তু সেই কাজ বিশ্ববিদ্যলয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগেই স্থির করলে ভাল হয়। যেমন, Alumni Association’এর দায়িত্ব থাকা উচিত Alumni’দের প্রতিনিধি হত্তয়া, UGC’র নিয়ম অনুযায়ী। আশ্রমিক সংঘের দায়িত্ব হওয়া উচিত আশ্রমিকদের প্রতীক হওয়া রবীন্দ্রনাথের তৈরি ব্যবস্থা অনুযায়ী। দুই দলকে একত্র করে একই সংস্থায় পরিনত করা হয়তো অবস্্য দরকার, কিন্তু সে বোধহয় একদিনে করার মত কাজ নয়। সুতরাং, তারা দুই দলই আসুক, এরকম ব্যবস্থাই হয়তো ভালো হবে। কিন্তু তাতেও হচ্ছে না। আমার মনে হয় এই সব দল ছাড়াও, কিছু পরামর্শদাতা শ্রেনীর প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী হয়তে আছেন যাঁদের বক্তব্য এবং কাজের নথি হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন এবং তার জন্য সংস্থাগত টিকিট ছাড়াই তাঁদের কথা শুনতে বা তাঁদের আলোচনায় আনতে বিশ্ববিদ্যালয় উতসুক হবেন। সুতরাং কিছু স্বতন্ত্র ভাবে আমন্ত্রিত ব্যক্তিও হয়তো থাকতে পারেন প্রাথমিক আলোচনায়।
- কতজন হওয়া উচিত? এইটা একটা গোলমেলে প্রশ্ন। খুব বেশি লোক হলে কাজের বদলে হট্টগোল হবে। তাছাড়া, আমি কিছু মিটিংয়ে ছিলাম শান্তিনিকেতনের ব্যাপারে - দেখেছি মিটিংয়ের পর তার কোনো decision কাজে পরিনত করাতে আমাদের record খুবই খারাপ। আমরা কথা বলতে ভালবাসি, কিন্তু তার থেকে সতি্যকারের কাজে নামার ব্যাপারে আমাদের বেশির ভাগ লোকই অনুপযুক্ত। সুতরাং, প্রাথমিক আলাপ আলোচনা কিভাবে এগোবে এটা ঠিক করতে গিয়েই বাঙালি ডিগবাজি খেতে পারে। যাই হোক এটাও আরেকটা মহাকর্তব্য।
- একটা ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে বছরে একবার কি দুবার দুই পক্ষের প্রতিনিধিদলের বসার সময়সূচি তৈরি করলে ভাল হয়
- আমাদের কিছু করার আগে অনেক কিছু জানার আছে মনে হয় - বিশ্বভারতীর সবদিকের বিচারে কি অবস্থা, সরকারের দিক থেকে কি সুবিধা অসুবিধা, কর্মীদের দিক থেকে, অধ্যাপকদের ও ছাত্রদের দিকে - সবদিক জেনেই তবেই হয়তো পরামর্শ দেবার কথা আসে এবং সে পরামর্শের মূল্য থাকে।
- গ্রামোন্নয়নের কাজ শুধু শ্রীনিকেতনের কর্মচারির দায়িত্ব নয় - এটা সবাইকার দায়িত্ব। বিশ্বভারতীর অস্তিত্বের একটি প্রাথমিক কারণ হল আসেপাসের গ্রামের উন্নয়ন প্রচেষ্টা, শিক্ষাকে গ্রাম ওবধি পৌঁছানো, গ্রামে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনা এবং গ্রামদের শহরকর্তৃক শোষণ বন্ধ করা। বিশ্বভারতী এর চেয়ে অনেক বেশি করতে পারে আদর্শ আশ্রমিক ও বিশ্বনাগরিক তৈরির কাজে - কিন্তু এর চেয়ে কম করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব অবান্তর।
- একেকটা ভবনের সঙ্গে অন্য ভবনের কোনও সাংস্কৃতিক যোগ নেই, একের নৃত্যানুষ্ঠানে অন্যেরা গানে. নাচে, বাজনায় যোগ দেয়না - এই বিভাগমনভাব বন্ধ করতে হবে,
- শিক্ষকরা তিরিশ মাইল দূর থেকে এসে কোনও মতে চার ঘণ্টা ক্লাস করে একবেলা হাজিরা দিয়ে পালাবেন - এ চলবে না। ছাত্ররাও বলতে পারবেননা তাদের subject ছাড়া আর কিছু তাদের পড়ার বা জানার নেই। ভোরের বইতালিখ থেকে খেলার মাঠ ও সাহিত্য সভা যারা করতে নারাজ, গ্রামের কাজে যারা সময় দিতে অনিচ্ছুক, তাঁরা বিশ্বভারতীতে চাকরির অযোগ্য এবং ওখানে পড়ার অযোগ্য। UGCকে, শিক্ষামন্ত্রীকে এবং এবং আচার্যকে একথা জানানো দরকার, তাঁরা যদি এবিষয়ে ওয়াকিবহাল না থাকেন।
- বিশ্বভারতী কেবল স্থানীয় কর্মীদের ছেলেমেয়েদের চাকরি জোগাড় করার জন্য শিক্ষাববস্থা নয়। বীরভুম, বাংলা, ভারতবর্ষ তথা বিদেশের যোগ্য ছেলেমেয়েরা যাতে আসে তার জন্য কাঠখড় পোড়াতে হবে এবং স্থানীয় বাধা হটাবার ব্যবস্থা করতে হবে। তেমনিই, এই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয় সামস্ত পৃথিবীর অনুপ্রেরণার উৎস এবং নীড়ের যোগান দেবার জন্য, শুধু বোলপুর বীরভুমের স্থানীয়দের মধে্য চাকুরে সংখ্যাবৃদ্ধি উদ্দেশে্যই নয়। ছাত্র ও চাকুরি selection পদ্ধতি থেকে ভ্রষ্টাচার ও জবরদস্তি হটাতে হবে।
- বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক খানি downsize করতে জবে - ফালতু বিভাগগুলিকে প্রয়োজন হলে বন্ধ করে। non-teaching staff সংখা কমাতে হবে।
- রাজনীতির স্থান বিশ্বভারতীতে নেই - এই পদ্ধতি চালু করতে হবে ও বজায় রাখতে হবে। স্বজনপোষন বন্ধ করতে হবে।
- আমারা অনেকই সময় কাটিয়েছি অন্যদলের দোষ বিচার করে। এবার প্রয়োজন নিজেদের দোষ বিচার করা - self assessment। শিক্ষকরা নিজেদের, ছাত্ররা নিজেদের, প্রশাসকদল তাদের এবং আমরা, প্রাক্তনীরা আমাদের গলদ কি কি তার বিচার তালিকা বানাবো। আমার ধারণা প্রাক্তনীদের দোষের তালিকা সবচেয়ে লম্বা - তবে তা ঠিক না ভুল তা দেখা দরকার। আমাদের শেখা প্রয়োজন নিজেদের ভুল আগে উপলব্ধি ও স্বীকার করতে, ভুল শোধরাতে, তারপর না হয় পরের ভুল ধরিয়ে দিতে সাহায্য করার কথা চিন্তা করা যায় - ইংরাজিতে যাকে বল - charity begins at home।
- শোনা যাচ্ছে বহুবছর ধরে নাকি দিশ্বভারতীর অভ্যন্তরীণ শাসন - সম্বন্ধীয় ও অন্যান্য সভা ও বৈঠক নাকি আর শান্তিনিকেতনে হয়না - কলকাতাতে হয়। এটা কেন প্রশ্ন করতে হবে, এবং বিদ্্যালয়ের সময়, ব্যয় ও পণ্যের অপব্যাবহার বন্ধ করা প্রয়োজন। যিদ্যালয়কে হয়তো মিতাচার ও সংযম আবার করে শিখতে হবে। সভাস্থলের হাওয়া বদল যদি অভিপ্রায় হয়, তবে শান্তিনিকেতনের গণ্ডির বাইরে শ্রীনিকেতন, বিনয়ভবন, গোয়ালপাড়া, রায়পুর, সুরুল, ভুবনডাঙা, সিয়েনডাঙা, বাঁধগোড়া প্রভৃতি আসেপাসের অঞ্চলে সভার ব্যবস্থা করে ও তারই সঙ্গে পল্লী পরিভ্রমন করে সেখানের লোকের সুখদুঃখ এবং সেখানে বিশ্বভারতীর কর্মযোগ কতটা কার্যকর, এই সব স্বচক্ষে দেখে নিলে সব দিকদিয়েই ভাল হয় - এইরকম চেষ্টার হয়তো বিশেষ দরকার।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের বাতসরিক নিরীক্ষা (audit) করার সময় এটাও বিচার করতে হবে চার পাসের গ্রামের উন্নয়য়নের কাজ এগিয়েছে কি এগোয়নি - এবং তার মাপকাঠিও ব্যবহার হবে বিদ্যালয়ের যোগ্যতার পরিমাপ হিসেবে।
- এরকম হতে পারে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকেদের ইচ্ছে থাকা সত্যেও বাধা আসছে সরকার থেকে, কারণ বিশ্ব-ভারতীর কার্যকলাপ তাঁদের প্রমিত নিয়মের বাইরে পড়ছে। সেরকম যদি হয়, তবে সকলে হাত মিলিয়ে চেষ্টা করতে হবে সরকারকে আবার করে বোঝানো বিশ্ব-ভারতীর বিভিন্নতা কেথায় এবং কেন তার প্রয়োজন। তবে সেটা তখনই করা যায় যখন বিশ্ব-ভারতী নিজের দিকের অসঙ্গতিগুলি শুধরেছেন। নিজে কিছু না করে শুধু সরকারকে দাবি জানানোটা অবিধেয়।
আমি আজ সকালের আড্ডায় নানা লোককে এই প্রশ্ন করেছিলাম, তাদের বিচারানুযায়ী তালিকা বানাতে, নতুন প্রশাসনে আমাদের দিক থেকে কি কি ব্যাপারে হাত মেলানো উচিত মনে করি তার তালিকা বানাতে। সেগুলে পেলে একত্র করে, আরেকটু সংগঠিত এক সূচিপত্র পেশ করা যায়।
-------------
এ তো হ’ল সিরিয়াস কথা। এবার লঘুরসে আসা যাক। একটা গুজব রটালে কেমন হয় শান্তিনিকেতনে, যে, উপাচার্য যেই হন, অামরা শুনেছি প্রথমেই এক প্রতিষ্ঠিত প্রাক্তন ছাত্র ও বর্তমান উচ্চপদস্থ বাবুর দরকার সুটকেস জোগাড় করা, কারণ পনেরো দিনের মধ্যেই ওঁকে নাকি পাঠানো হচ্ছে নতুন পোষ্টিংয়ে - পিচকুড়ির ঢালের CGCO হ’য়ে? CGCO কি জানতে চান? Chief Goat chasing Officer - কারণ পিচকুড়ির ঢালে নাকি বাগান থেকে ছাগল তাড়ানো ছাড়া তাঁর উপযুক্ত আর কোনও কাজই পিচকুড়ির human resource ভবন খুঁজে পায়নি। তবে শোনা যাচ্ছে যে ঝাপটের ঢালে নাকি আরও কিছু পরিবর্তনশীল কর্মতালিকা পাওয়া গেছে, ছাগলের বদলে গরু, মহিষ, ভেড়া, শুকর প্রভৃতিকে নিয়ে।
এই শেষের ভাগটা ঠাট্টা করে লেখা, so don’t get ballistic!
এই লেখাটি অসম্পন্ন - সুতরাং দিনে দিনে ভারত সরকারের ভ্রষ্টাচরণ তালিকার মত এটাও বাড়বে - যদিও ভ্রষ্টাচার এর উদ্দেশ্য নয়। উদ্দশ্য শুভ কাজের সন্ধান।
ইতি লিখেছিনু রামহনু নামতনু

ও মন ব্লগেতে কাঁঠালের আঁঠা, সে একবার লাগলি পরে ছাড়বে না
গোলেমালে গোলেমালে ব্লগিং কোরো না
4 comments:
রাম হনু তনু বাবুর লেখাটি পড়া শেষ করিয়া মনে হইল প্রথমে কিছু সন্দেহ নিরসনের প্রয়োজন আছে | তিনি যে বিশ্ব ভারতীর প্রাক্তনী দিগের উদ্দেশ্যে 'ফেসবুক ' তথা আন্তর্জাতিক ও আন্তর্জালিক 'মুখপত্রে' তাঁহার বক্তব্য পেশ করিয়াছেন তাহাতে তিলমাত্র সন্দেহ নাই ; কিন্তু অকারণ হনুমান কুলের প্রতিনিধিত্ব করা কেন ? বিশেষতঃ হনুমানকুলের অনুমতির অপেক্ষা না রাখিয়া ? এখন যদি হনুমানকুল প্রশ্ন তোলেন - এই ভাবে তাঁহাদের অবমাননা করিবার অধিকার তনুবাবুকে কে দিল - তাহার উত্তর কি তনুবাবুর প্রস্তুত আছে ? বিশ্ব ভারতী নামক প্রতিষ্ঠানটি শুনিয়াছি শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কল্পনাপ্রসূত; তিনি বিশ্ব বিখ্যাত কবি-ও বটেন; কবিতা লিখিয়া সাহেবদিগের নিকট হইতে নোবেল প্রাইজ-ও পাইয়াছেন | মহৎ কবির কল্পনায় যাহার সৃষ্টি, সেই প্রতিষ্ঠানটির মহত্ত্ব সকল সংশয়ের ঊর্ধ্বে | অতএব তাহার সম্পর্কে আর নতুন করিয়া চিন্তা করিবার কিছু আছে কি ? অকারণ মস্তিস্ককে উদ্ব্যস্ত না করিয়া নাকে দুই ফোঁটা সর্ষের তেল ঢালিয়া ঘুমাইয়া পড়া-ই বুদ্ধিমানের কাজ ; তাহাত আর কিছু না হোক সর্ষে চাষ যাঁরা করেন তাঁহাদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটিবে - ইহাতে রবিঠাকুরের আত্মাও শান্তি লাভ করিবে , আর কিছু না হোক গ্রামীন উন্নতি কিছু পরিমাণে তো হইল !
পিচকুরির ঢালে কাজ করিবার প্রস্তাবটি মন্দ নয় | আজকাল দেশের কলেজ ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে যে গড্ডলিকা প্রবাহ চলিতেছে তাহাতে ছাগল-গরু চরাইবার কাজে যাঁহাদের দক্ষতা জন্মাইবে তাঁহারাই গবেষণার কাজে অগ্রণী হইবেন ইহাতে কাঁহার সন্দেহ আছে ? আমার প্রশ্সন্ন গোয়ালিনী খেতাব পাইয়া যদি আধ পোয়া দুধ বেশি দেয় তাহাতে আমার পোয়া বারো | তনু বাবুর এইটুকু গুণ মানিতে আপত্তি কি ?
হনুমানের কথা বলতে গেলে ইন্দ্রজিত কে নিয়ে আসা দরকার। না, দক্ষিণ কলিকাতার মৈত্র মশাই’য়ের কথা বলছি না - বলছি রাবনপুত্র মেঘনাদের কথা। সেই ইন্দ্রজিত’এর ছোঁড়া শক্তিশেলকে টানাটানি করেও হনুমান কিছুতেই লক্ষণের বক্ষঃস্থলথেকে বার করতে অক্ষম হয়। শেষ ওবদি গন্ধমাধন পর্বত কাঁধে করে হিল্লী দিল্লী করতে হয়েছিল তাকে - এবং আজ সবাই হনুমানকে সেই জন্যই মনে রেখেছে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - গন্ধমাদন উড়ল হনুর পৃষ্ঠে চেপে।
সেই মহাবানরের নাম নিয়ে এগোতে গিয়ে দেখি তার চোলাচামুণ্ডারা আজ রবীনদ্রনাথের নামে চাটনি বানিয়ে বাজারে ছড়াচ্ছে, এবং সেই রবীন্দ্র-চাটনির টক যাদের সহ্য হয়না তারা রবীন্দ্র-প্যাঁড়াকির খোঁজে হন্যে হয়ে ঘোরাঘুরি করছে কালোর দোকানের আসে পাসে। রবীন্দ্রনাথ নিজেই শ্রীনিকেতনে গরুর দুধের দিকে খেয়াল দিয়েছেন। তবে তাঁর পায়ের চিহ্ণ যখন লোপ পাবে তখনকার কথা ভেবে গরুর ঘাস ও রাখাল ছেলে কে নিয়ে লিখেছেন - চরবে গোরু খেলবে রাখাল ওই মাঠে। তবে এটা ভাবা ভুল হবে যে রবিচেতনা প্রস্ফুটনের জন্য শুধু ঘাস ও মাঠের রাখাল থাকলেই যথেষ্ট। কয়েক পোয়া দুধের চেয়ে মধুর তরলতার উল্লেখে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - অভয় দাও তো বলি আমার wish কী– একটি ছটাক সোডার জলে পাকী তিন পোয়া হুইস্কি॥
এদিকে আজ আড্ডাস্থলে বোরিয়া, টুকুল, তাপসদা এবং শেষের দিকে পিয়ালি এসেছিল নানা কথা বলতে ও শুনতে। এই বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার ওপর প্রবন্ধ সংকলনের সংযোজন প্রবন্ধে লিখেছিলেন -
QUOTE: সকলের গোড়ায় চাই শিক্ষিত মন। ইস্কুল-কলেজের বাইরে শিক্ষা বিছিয়ে দেবার উপায় সাহিত্য। কিন্তু সেই সাহিত্যকে সর্বাঙ্গীণরূপে শিক্ষার আধার করতে হবে; দেখতে হবে তাকে গ্রহণ করবার পথ সর্বত্র সুগম হয়েছ। এজন্যে কোন্ বন্ধুকে ডাকব? বন্ধু যে আজ দুর্লভ হল। তাই বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারেই আবেদন উপস্থিত করছি।
মস্তিষ্কের সঙ্গে স্নায়ুজালের অবিচ্ছিন্ন যোগ সমস্ত দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়কে সেই মস্তিষ্কের স্থান নিয়ে স্নায়ুতন্ত্র প্রেরণ করতে হবে দেশের সর্বদেহে। প্রশ্ন এই, কেমন করে করা যেতে পারে। তার উত্তরে আমার প্রস্তাব এই যে, একটা পরীক্ষার বেড়াজাল দেশ জুড়ে পাতা হোক। এমন সহজ ও ব্যাপক ভাবে তার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে ইস্কুল-কলেজের বাইরে থেকেও দেশে পরীক্ষাপাঠ্য বইগুলি স্বেচ্ছায় আয়ত্ত করবার উৎসাহ জন্মে। অন্তঃপুরে মেয়েরা কিংবা পুরুষদের যারা নানা বাধায় বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না তারা অবকাশকালে নিজের চেষ্টায় অশিক্ষার লজ্জা নিবারণ করছে, এইটি দেখবার উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় জেলায় জেলায় পরীক্ষার কেন্দ্র স্থাপন করতে পারে। বহু বিষয় একত্রে জড়িত ক'রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি দেওয়া হয়, এ ক্ষেত্রে উপাধি দেবার উপলক্ষে সেরকম বহুলতার প্রয়োজন নেই। প্রায়ই ব্যক্তিবিশেষের মনের প্রবণতা থাকে বিষয়বিশেষে। সেই বিষয়েই আপন বিশেষ অধিকারের পরিচয় দিতে পারলে সমাজে সে আপন বিশেষ স্থান পাবার অধিকারী হয়। সেটুকু অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করবার কোনো কারণ দেখি নে। UNQUOTE
মনে হয় রবীন্দ্রনাথকে হুবহু কপি না করেও আজকের দিনের উপযোগী শিক্ষাপথ খুঁজতে গিয়ে যদি আমরা কিছু পথপর্দর্শকের খোঁজে থাকি শুধু গাইড-বই হিসেবে ব্যবহার করতে, তবুও রবীন্দ্রনাথের শিক্ষার ওপর চিন্তার যথেষ্ট scope এবং span অাছে পাথেও সংগ্রহের।
বোরিয়া যে সব কথা বলছিল, মনে হয় সেগুলও লিখে রাখা দরকার, আশা করছি ও নিজেই সেটা করবে একসময়।
ইতিমধে্য বানরকুলের নামটা পছন্দ হয়েছে বলেই ছিঠি শেষ করছি এই সই করে -
লিখেছিনু রামহনু নামতনু
Post a Comment