Search This Blog

Wednesday, August 3, 2011

সব কি ইংরিজিতে না লিখলেই নয় ?


নমষ্কার। শুরু করেছিলাম ব্লগ লেখা জুন মাসের শেষের যিকে, এবং উতসাহ প্রথমে যায় সন্ন্যাসী বিদ্রোহ এবং দেবী চৌধুরানীর দিকে। কিন্তু এই দেড় মাসে লেখার মোড় অনেকবার ঘুরেছে। পাঠকরা বলবেন আমার লেখাতে সামঞ্জস্যের অভাব - এবং ঠিকই বলবেন।

তবে যে কঝন মোটামুটি মন দিয়ে পড়েছেন কিছু কিছু ব্লগের লেখা, তাঁরা হয়তো একটি প্রবণতা বা ট্রেন্ড দেখতে পাবেন - যেমন ক্রমশ বাংলাতে লেখার ঝোঁক দেখা যায়, এবং তারই সঙ্গে বাংলার বাক্য প্রয়োগে কিছুটা স্বচ্ছলতা অাসছে অভ্যেস বসতঃ। আরেকটি প্রবণতা হল - অতিতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানের দিকে এবং ভবিষ্যতের কথা বলারও সমান ইচ্ছে। আাবার এও কেউ কেউ বলবেন হয়তো, যে ঘরের ছেলে ঘরে ফেরার মত, ঘুরে ফিরেই রবীন্দ্রনাথের বিষয়ে এবং তারই সঙ্গে বিশ্বভারতীর াতিত-ভবিষ্যত চিন্তা আমার মনে এবং কলমে (keyboard’এ বলাটা আরও সঙ্গত হবে) চলে আসছে।

By Sukhamoy Mitra
কিন্তু আজকের লেখার ইন্ধনটা এসেছে লীনা দি ও পিয়ালির নিরীক্ষা থেকে - ইংরিজিতে লিখবো না বাংলাতে, সেই বিষয়ে। লিখেছিলাম বিশ্বভারতীর আগামী উপাচার্য নির্বাচন নিয়ে। তারই সঙ্গে আমরা প্রাক্তনীরা, যারা দুই তিন প্রজন্ম বিশেষ কিছুই করিনি বিশ্বভারতীর পুনরূজ্জীবন-চেষ্টায়, তাদের কি এই বিলম্বিত লয়ে এই উপেক্ষিত শুভকাজে যোগ দেবার সম্ভাবনা আছে কিনা - এই চিন্তা মাথায় এসেছিল। সেই চিন্তা ফুটেছিল, আমারই অদ্ভুত ও বিশেষ রচনাভঙ্গিতে - বাংলায়। মাথায় যে সব সময় সব চিন্তা গুছিয়ে গুরু থেকে লঘুপদ ক্রমানুশারে আসে, তা নয়। এবং সব ধারণাই যে ঠিক, তাঔ নিশ্চই নয় - কিন্তু তাও, যেমন মাথায় এসেছে, তেমনি লিখে ফেলেছি এবং তুলে দিয়েছি সবাই চাইলে দেখতে পায় এমন স্থানে - গুগল ব্লগে।

সেটা পড়েই লীনা দি বলেছিলেন, তান লী দাও, এটা ইংরিজিতে অনুবাদ করলে ভাল হয়, অনেক বেশি লোকে পড়তে পারবে। আমি ইংরিজিতে অনুবাদ করে দিয়েছি, এই লেখার আগেরটাই। কিন্তু তারই সঙ্গে লীনাদিদের এটাও প্রশ্ন করেছিলাম - কি হবে ইংরিজিতে লিখে, বেশি লোককে দেখিয়ে। পরে, তা নিয়ে ফেসবুকের পাতাতেও আমার মন্তব্য লিখেছিলাম। আজ ভাবছি তাই নিয়েই এখানে লিখবো।

ইংরিজিতে আমরা কেন লিখি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে, বাংলা সংস্কৃতিকে নিয়ে, বিশ্বভারতীকে নিয় - এটা আমার আজকের প্রশ্ন। কি দরকার আছে রবীন্দ্রনাথের সমাচিন্তা, যা বেশির ভাগই সখনকার বৃহত্তর বাংলাদেশকে নিয়ে লেখা, এবং ততকালীন অখণ্ড ভারতবর্ষকে নিয়ে লেখা। তিনি পাশ্চাত্যের সভ্যতার ওপর, বিশেষ করে তাদের  একদিকে স্বাদীনতা, গনতন্ত্র ও সাম্যবাদ নিয়ে দম্ভ এবং তারই সঙ্গে নিষ্ঠুর সাম্রাজ্যবাদ ও দূরদেের লোকেদের শোষণের পরস্পরবিরোধী প্রকাশ ও বিশ্বযুদ্ধ দেখে সভ্যতার ওপর আস্থা হারিয়েছিলেন - এবং সভ্যতা সংকট নিয়ে লিখেছিলেন। কিন্তু তা হলেও, উনি যতদূর জানি তাঁর সমাজ উন্নয়ন ও অাদর্শ শিক্ষার ভাবনা চিন্তা অখণ্ড ভারতবর্ষ সম্বন্ধেই ছিল। সুতরাং আমার প্রশ্নটা বার বার মনে আসে - সে বিষয়ে আজ যদি লিখতে চাই, কেন ইংরিজিতে লেখা দরকার ?

পাটক বলতে পারেন, রবীন্দ্রনাথতো নিজেও এসব নিয়ে প্রায়ই ইংরিজিতে লিখেছেন। কিন্তু সেই যুক্তি কি আমার বেলা খাটে? আমরা জানি রবীন্দ্রনাথকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বার বার দৌড়তে হয়েছে এখানে সেখানে, লিখতে, বক্তৃতা দিতে, টাকা তুলতে। তখনকার দিনে টাকা তোলার কয়েকটিই উপায় ছিল - দেশে রাজা রাজড়াদের ধরা, এবং ইংলণ্ড, আমেরিকাতে ইংরিজিতে ভাষণ দেওয়া এবং লেখা পেশ করা। সেই টাকা দিয়ে শান্তিনিকেতনের মত প্রতিষ্ঠান চালানো।

বর্তমানে, শান্তিনিকেতন চালানোর ভার ভারত সরকারের। সে আমাদের টাকার জন্য অপেক্ষা করছেনা। আমরা যদি নানা বিদেশি বিদ্যালয়ে গিয়ে বক্তৃতা দিই, এবং তার জন্য এক, পাঁচ বা দশ হাজার ডলার নিই এক ঘণ্টা কথা কথা বলার জন্য, সে টাকা আমরা সাধারণতঃ পকেটস্থ করি।

সুতরাং এটা কি বলা যায় যে - আজ রবীন্্রনাথের বিষয়ে ইংরিজিতে লেখার অন্যতম প্রধান ুদ্দেশ্য হল যে লেখক তার নিজের উপার্জন ও খ্যাতি কামনা ?

লীনা দি বলেন যে রবীন্দ্রনাথকে বিদশীরা তেমন চেনেনা, এবং আমাদের কর্তব্য হল তাঁর কথা বিদেশে প্রচার করা,  এবং টাকা পয়সা উপার্জনের চেষ্টা ছাড়াও, নিঃস্বার্থ ভাবে তা করা। লীনাদির যুক্তিটা বুঝি, কিন্তু তা হলেও পুরোপুরি মন থেকে মানতে অসুবিধা হয়। সাধারণতই আমার মনটা কিছুটা বিতর্কমূলক এবং কিছুটা বৈশ্লেষিক। কোনও উপদেশই অন্ধবৎ হজম করাটা স্বভাবে নেই। খুঁটিয়ে বিচার করাটা একটা বদভ্যেস বলা যায়।

প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে - shakespeare যে কত ভাল ভাল সাহিত্য রচনা করেছেন ইংরিজিতে। কই ইংরেজরাতো বাংলা বা হিন্দি শিখে তাঁর সাহিত্যের মর্জাদা আমাদের মাতৃভাষায় প্রমান করতে প্রাণপাত করছেননা বিশেষ? প্লুটো কি ভাবতেন বা গালিলিও কি আবিষ্কার করেন, দা ভিঞ্চি কিরকম ছবি আঁকতেন বা ভাস্কর্য সৃষ্টি করেছেন, মার্ক টোয়েন কেমন লিখতেন, এগুলোতো আমাদের ইংরিজি পড়েই জানতে হয়েছে। সুতরাং রবীন্দ্রনাথ যে এক অসাধারণ ব্যক্তি ছিলেন তাঁর প্রমাণও বিদেশীদের কেউ কেউ বাংলা পড়েই জেনেছেন। আমাদের দেশের লোকই যখন রবীন্দ্রনাথকপ ঠিক মত চেনেনা, তখন বিদেশীদের েপছনে অত দৌড়বার কি প্রয়োজন?

একটা কারণ অবশ্য আমরা নিজেরাই। দেশ ছেড়ে ধনমানের সন্ধানে আমরা অনেকেই বিদেশে বাস করি।  চাকরির ক্ষেত্রে ইংরিজিতে কথা বলি এবং লেখালিখি করি। একসময়ে, ইংরিজিতে কথা বলাটা জাতে ওঠার লক্ষণ ছিল। আজ, কলকাতাতে সমৃদ্ধ বাঙালিরা বাড়িতে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ইংরিজিতে কথা বলে। বাংলা তো গেঁয়োদের জন্য - অর্ধশিক্ষিত চাষাভুসোদের জন্য। সুতরাং আজকের নতুন প্রজন্মের উচ্চশিক্ষত তরুন তরুনীরা, বিশেষ করে যারা অনেক বছর বিদেশে আছে, তারা বাংলা অনেকে বলতেই পারেনা - লেখা তো দূরের কথা।

কিন্তু আমাদের সাংস্কৃতিক গর্বটা যায়নি। আমরা বাঙালি, রবীন্দ্রনাথের জাত - আর তাছাড়া, রবীন্দ্রনাথ, একশো পঞ্চাশ বছর বাদেও, একটি অক্ষয় স্বর্ণখনিবলে প্রমানিত হচ্ছেন - তাঁকে নিয়ে আজও লিখে হাততালি পাওয়া যায় কিছু সাহেবদের কাছে - সুতরাং কেন নয়?

রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার হেরফের’এ লিখেছেন যে বাংলা ভাষায় বেশি কিছু লেখা নেই বলে। ভাষার বিস্তার হয় ব্যবহারের সঙ্গে। যত লোকে নানা বিৎয়ে লিখবে ততই সে সাহিত্যের প্রসার হবে। সুতরাং, সমাজ দায়িত্য ছাড়াও, আমাদের মাতৃভাষা সম্পর্কিত একটা দাইত্যও আছে মনে করি। এবং রবীন্দ্রনাথের দূরদর্শিতা সম্বন্ধে যদি বিদেশীরা ওয়াকিবহাল না থাকেন, বাঙালি সম্প্রদায়ও তেমন কিছুই জানেন না - দুচারটি গান ছাড়া। আমরা যদি মনে করি তার সম্বন্ধে বলার আছে কিছু, বাংলাতেই বা বলি না কেন? আজকের দিনে তো তার শিক্ষা ও পল্লী উন্নয়ন চিন্তা আবার করে ানিবার্য ও অপরিহার্য মনে হচ্ছে - সারা বিশ্বের জন্য। তবে সেটা শুধু আমেরিকানদের জন্য না লিখে কয়েকবার বীরভুমের লোকদের জন্য লিখলে কি দোষ হয়?

আজকাল কাগজে পেনসিল বা কলম দিয়ে লোকে তেমন আর লেখেনা। একে অন্যকে ফোন করে, ই-মেল লেখে এবং Facebook ইত্যাদি আন্তর্জালীয় সংস্থান মানফত একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোত রাখে। হাতে কলমে লেখার অভ্যেস চলে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় - ইংরাজিটা এই সব নতুন মাধ্যমে সার্বজনীন ভাষা। সুতরাং লোকেরা ইংরাজিতে লেখা, কথা বলা, ভাবা, স্বপ্ন দেখাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বাংলা যদি প্রানে বাঁচে ভারতবর্ষে, তো মনে হয় গ্রাম বাংলার জন্যই বাঁচবে। শহরের উর্ধগামী মধবিত্ত সমাজে বাংলা শিগগিরিই হয়তো হাসপাতালে অন্তিম শয্যায় খাবি খাবে।
আরেকটা কথাও উল্লেখযোগ্য মনে করি। ইংরিজিতে তো অনেক পণ্ডিতই লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে। সেসব লেখা একত্র করলে পর্বতাকার স্তুপ হবে কাগজের। একথা নিশ্চিত বলা যায় যে তাঁর ওপর ভবিস্যতেও পর্বতপ্রমাণ লেখা ও বিশ্লেষণা আবার হবে। এত লেখালিখি করে, লাভটা কি হয়েছে, এবং কার হয়েছে? ভারতবর্ষ এখনও তাঁর মর্ম জানেনা, তার শিক্ষা ও সমাজচিন্তা জলাঞ্জলি গেছে শান্তিনিকেতনে। ভারতবর্ষ এখনও তার গ্রামকে বাঁচাবার রাস্তা খুঁজে পায়নি - না পেরেছে সবাইকে মনুষ্্যত্বের শিক্ষা দিতে, বা নিযেদের মধ্যে ভাগাভাগী মারপিট বন্ধ করতে। দেশের নেতারা দেশকে লুট করতে ব্যস্ত। আর আমাদের মত পলাতক ভারতীয়রা বিদেশের আরামের জীবন কাটিয়ে, ইংরিজিতে লোককে লেকচার দিয়ে বেড়াচ্ছি রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে।

তবে যারা দেশে আছেন, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, তারা যে কিছু বৃহত কর্ম করে উল্টে দিচ্ছেন তাও না। তবে মনে হয় সেখানে হয়তো, সাধাসিধে লকোকেদের মধ্যেই সই, বাংলা লেখাটা এখনও অল্পবিস্তর প্রচলিত আছে।

সুতরাং - আমার আদি প্রশ্নটা ঘুরেফিরে আসছে - কিন্তু জবাব পাচ্ছি না - রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা বা সমাজ, বা মানবধর্মচিন্তা নিয়ে ইংরিজিতে লিখে কি ঘোড়ার ডিম হবে?

রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে কিরকম শিক্ষা ব্যবস্থা শুরু করতে চেয়েছিলেন তা দেখতে গেলে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তার ক্রমবিকাশ, ও চারদিকের রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিবৃত্তের ভটনাবলী এবং রবীন্দ্রনাথের মনে তার প্রভাবও জানতে হয়। কিকরে গোঁড়া হিন্দু মতভাবাপন্য ব্রহ্মবিদ্যালয় পরিণত হ’ল ধর্মনিরেপক্ষ আধ্যাত্তিকতা বিকাশের সঙ্গে প্রকৃতিপরিচয়, সঙ্গীত কলা চর্চা, পল্লী উন্নয়ন, পূর্বের ্চীন-জাপানের সঙ্গে সালস্কৃতিক যোগস্থাপন ও  মানবধর্মবিকাশের এক বৃহত কর্মযোজ্ঞস্থল - সেটা বোঝার মত বিষয়।

যাঃ অনেক লিখেছি - ঘুম পাচ্ছে এখন
টা টা

No comments: