Search This Blog

Thursday, August 11, 2011

HLC REPORT’এর ফাঁক বিশ্লেষণ

বিশ্বভারতীকে ঠিক পথে ঘোরানোর যদি প্রয়োনীয়তা থাকে আজও, তবে কি করে তা করা যায় তা চিন্তা করতে গিয়ে যে কয়টা প্রধান কথা মনে আসে তা হল উপাচার্য যে মানুষই হন, এবং তাঁর ইচ্ছা যাই থাকুক, তার হাতে যদি ঠিক ঠিক যন্ত্র বা অস্ত্র না দেওয়া হয়, তাহলে তার ঠিক ঠিক ভাবে পরিবরতন আনা হয়তো অসম্ভব হবে। অথচ, সেরকম যন্ত্র হয়তো প্রশাসনের হাতে তোলা যাবেনা যতক্ষন সংসদের বিশ্ব-ভারতীকে নিয়ে যে আইন করা হয়েছে, তার সংশোধন হয়। সুতরাং - এই সংশোধনে কি কি সংযোজন থাকা উচিত, আর কি কি দূরকরণ - তা খুঁতিয়ে দেখা দরকার এবং দিল্লীকে আবেদন করা দরকার, হয়তো কলকাতায় মমতাকেও। তার প্রথম পদ হিসেবে Visva-Bharati act’টা আবার পড়তে শুরু করেছি, এবং ভাবছি লীনা দির সঙ্গে বসে একটা খসড়া তৈরি করবো, ইংরিজিতে এবং বাংলাতে - দিল্লী কলকাতাকে ভবিস্যতে ঠেলা দেবার উপলক্ষে।
Parliament act পড়া ও সংশোধন করার ব্যাপারে কোনই অভিজ্ঞতা নেই - কিন্তু একজন আছেন জিনি এসব কাজে অভিজ্ঞ এবং একাজে হাত মেলাতে রাজি - লীনা চ্যাটার্জী।  তাঁর সঙ্গে বসে অগাস্টের আট তারিখ মাঝ রাতে, বিশ্ব-ভারতী act নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করদ হল কিছুটা। তার সঙ্গে amendment গুলোও দেখা হল, পড়া হল আবার করে HLC রিপোর্টের পনেরটি সুপারিশ। সতি্য কথা বলতে হ’লে, সেই তালিকাটি খুব ভাল ও উপযুক্ত মনে হয়েছিল যখন প্রথমবার পড়েছিলাম বেশ কিছু বছর আগে। শ্রী গোপাল গান্ধী তান লী দাকে সেই বইটির একটি কপি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু, এই কয় বছরে শান্তিনিকেতন তথা বিশ্ব-ভারতী সম্পর্কে আমার ধারনা পাল্টেছে, জ্ঞান বেড়েছে, নানা লোকের, দপ্তরের ও বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ হ’য়েছে ও মতবিনিময় হয়েছে। সুতরাং বর্তমান পটভূমিতে - সেই পনের দফার সুপারিশ মনে হয় যথেষ্ঠ নয়। অনেক দরকারি কথা বাদ পড়েছে এবং কিছু মামুলি ব‍্যাপারকে প্রাধান‍্য দেওয়া হয়েছে হয়তো।
এখন আমারা কি কি করা উচিত বোধ করি, এবং তার কি কি গত রাজ্যপালের পনের দফা সুপারিশে শামিল, এবং কি কি বাদ পড়েছে এবং অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, তার ফাঁক বিশ্লেষণ করা হয়তো প্রয়োজন। তার জন্যই এই লেখাটি তৈরি। ইংরিজিতে এই ধরণের প্রচেষ্টাকে কেউ কেউ Gap Analysis বলেন। তারই সরাসরি অনুবাদ করে আমি ফাঁক বিশ্লেষণ কথাটি ব্যবহার করি এখানে।
রাজ্যপালের সুপারিশ তালিকা ধরেই বিশ্লেষণ শুরু করছি।

পরিবেশ
১. বিশ্বভারতী সংরক্ষণ সমিতি গঠন করা, যাতে উপাচার্য নেতৃত্ব দেবেন এবং যাতে SSDA’র প্রতিনিধিরা থাকবেন। তাতে উপাচার্যর নেতৃত্য থাকা উচিত। এই সমিতির কাজ হবে বিশ্বভারতীর জমির মালিকানা বিষয়ক সব কাগজপত্র দেখা এবং বিশ্বভারতীর প্রাপ্য জমির সীমানির্দেশ করা।
এই কাজ কতদূর এগিয়েছে জানা নেই। বর্তমানে SSDA জীবিত না মৃত তাও জানা নেই। এই রিপোর্ট লেখা হয় যখন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় SSDA’এর নেতা ছিলেন। বিষয় টা গুরুত্বপূর্ণ, এবং এর সমাধান নিয়ে মতানৈক্য আছে। আজ যে বিশ্বভারতীর চারিদিকে দেয়াল উঠানো হয়েছে তা নাকি HLC রিপোর্ট অনুযায়ী। অথচ রিপোর্টে দেয়াল তোলার উল্লেখ নেই। শুধু তাই নয়, প্রাচীরবেষ্টিত বিশ্বভারতী এবং রবীন্দ্রনাথের চিন্তা পরস্পরবিরোধী। বিশ্বভারতীর জমির সীমিকরণ ও রক্ষা এরকম চরম চক্ষুশূল বিশ্রী শহুরে কদর্যতা  ছাড়াই সৌন্দর্যবোধবিশিষ্ট প্রকারে মুক্ত দিগন্তকে অবরুদ্ধ না করেই করা যেত এবং তাই করা উচিত ছিল। মনে হয় রিপোর্টকে অপব্যবহার করা, বা তার থেকে অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করার কামনা বিশ্ববিদ‍্যালয়ে বর্তমান।

২. উত্তরায়নকে ঐতিহ্যময় ঘোষণা করা হোক এবং সাংস্কৃতিক মন্ত্রীত্যের অধীনে আনা হোক। 
মনে হয় এটা হয়ে গেছে। তাতে বাড়িগুলির রক্ষণাবেক্ষণ হয়তো ভাল করে হবে। বাকি কি উন্নতি হয় তা দেখার ইচ্ছে রইল।

৩. হাইকোর্ট বা সুপ্রীমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতিকে নিয়োগ করা উচিত বিশ্বভারতীর জমি যদি বেআইনীভাবে যদি চুরি বা বাজেয়াপ্ত করা হয়ে থাকে, তা দেখতে ও প্রতিকারে রপ্ত হতে।
এই কাজটি করা হয়েছে কিনা জানি না। কেউ কি বলতে পারেন ?

৪. এক আন্তর্জাতিক মানের বাসস্থান তৈরি করা হোক আমন্ত্রিত বিদ্বান ও পণ্ডিতদের জন্য।
এই যুক্তিটা পুরোপুরি মানতে পারলাম না। যেই বিখ্যাত গবেষকরা পেরু বা সাইবেরিয়া কি সাহারাতে গিয়ে ভাল কাজ করতে যান, তাঁরা কখনই ওখানে গিয়ে ওয়াল্ডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া বা তার মত পাঁচ তারকার (five star) হোটেল আসা করবে না। যা আসা করবেন তা বিশ্বভারতীতে বস্তুগত ভাবে আছে, হয়তো ছোটখাটো উন্নতি দরকার তাতে। যেখানে গন্ডগোল এবং ভীষণ ভাবে যা লক্ষিত হয়েছে, তা হল অমানুষিক অবহেলা, অতিথি অবমাননা, এবং  অতিথিযালার পরিচ্ছন্নতা, শুচিতা রক্ষার প্রতি চুড়ান্ত অমনযোগিতা। বিশ্বভারতী কি করে অতিথি সেবা করতে হয়, কি করে আগন্তুকদের বরণ করতে হয়, সাদর অভ্যর্থনা করতে হয়, কিকরে তাদের থাকাকে আনন্দদায়ক মনোরম করতে হয় - তা ভুলে গেছে। যারা অতিথিশালায় চাকরি করে তারা মাইনে নেয় নিশ্চই, কিন্তু অতিথি আপ্পায়ন কি বস্তু তা জানেই না। তারা ঘরগুলিকে পরিস্কার ছিমছাম রাখা তো দূরের কথা, জঘন্য অবস্থাশ রাখে। ঘরে ঝুল আর মাকড়সার জাল, বিছানার চাদর ছয় মাসে পাল্টানো হয়নি, তাতে ছোপ ছোপ দাগ। ঘরে গন্ধ। চানের ঘর তকতকে পরিস্কার নয়। দরজা জানলা ভাল করে বন্ধ হয়না, খোলে না। Internet’এর ব‍্যবস্থা নেই কিম্বা থাকলেও তার তত্বাবধানের কাজ যাদের তাদের দরকারে পাওয়া যায়না। সারা বাসস্থানে একটা নিদারুন অবহেলা ও অবক্ষয়ের ছাপ। রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা খুবই খারাপ, কারও মাথা ব্যাথা নেই রোজ দেখে যাওয়ার, গাফিলতি ঠিক করার বা কারোর ভুল শোধরাবার। বিশ্বভারতীকে আন্তর্জাতিক বাসস্থান দেবার কোনও দরকার নেই এখন।  দরকার তার নানা রকম গেস্ট হাউসগুলির সব রকম উন্নতি করা, তাদের মার্জিত করা, ছিমছাম পরিষ্কার করা এবং অতিথিদের সুবিধা অসুবিধার দিকে এখনের চেয়ে একশো গুন বেশি নজর দিতে শেখা। বিশ্বভারতীর ঘাটতি টি hardware’এ নয়, software’এ।
সত‍্য কথা বলতে গেলে - সারা বিশ্ববিদ‍্যালয়ে software’এ গোলমাল - virus infected।

৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগগুলিতে নিজ নিজ সংরক্ষণের জন্য বিশেষ কর্মচারী নিযুক্ত করা হবে এবং তাদের পর্যাপ্ত পরিকাঠানো ও সাহায্য দেওয়া হবে যারা বর্জিতাংশ ও জঞ্জাল বিনস্ত করবে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে।
এখানেও আমি মনে প্রাণে এই সুপারিশকে মানতে পারলাম না। বিশ্বভারতীর লোকেরা গোপাল গান্ধিকে তাঁদের মত জানিয়েছে এবং তার মধ্যে দেখতে পাই লোকেদের চিরাচরিত চাহিদা - আরও দাও, আরও দাও। যেহেতু অবর্জনা দূর করা হচ্ছেনা ঠিক করে, সুতরাং সব বিভাগে অরও পাঁচটা করে লোক রাখা হোক যারা আবর্জনা কি করে দূর করা যায় দেখবে। এটা হল শুধু আরও লোকের চাকরি বাড়ানোর ধান্ধা, সরকারের কাছ থেকে কিছু কাজ না করে আরও আদায় করার ফন্দি, কাজ সমাধান করার নয়। অবর্জনা দূর করা, প্রকৃতিকে রক্ষা ও পালন করা সবার সন্মিলিত কাজ হওয়া উচিত, এবং এটা তাদের শিক্ষার অন্যতম প্রধান অঙ্গ হওয়া দরকার। এর মধে‍্য আবার বাঙালি মধ‍্যবিত্ত মনবৃত্তি দেখা যায় - নিজে কিছু কাজের হাত লাগাবো না - দরকার হলে আরও চাকর বাকর রাখা হোক - তারা কাজ করবে। এক কথায়, বিভাগ গুলির উচিত তারা আবর্জনা দূরিকরণও করবে এবং আরও লোক না নিয়েই করবে। এমনিতেই ওখানে চাকুরেরা গিজগিজ করছে কাজ না করেই।

৬. বৈদ্যশালা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার সর্বাঙ্গিক উন্নতিসাধন দরকার।
এই সুপারিশ গুলি দেখলে হাসিও পায়, কষ্টও হয়। সব কিছুই সরকারের কাছে দাবি, অথচ স্থানীয় লোকেরা কিছুই করবে না, শুধু সরকারী টাকার অপচয় করবে। চিকিৎসালয়ের এমন দূরবস্থা কেন ? টাকার অভাবে না ফাঁকিবাজ সরকারি টাকা অপচয় করার লোকের প্রাধান্য হেতু ? হাসপাতালের উন্নতি না করতে পারলে ওখানের কর্মচারিদের ইস্তফা দিয়ে এমন লোকদের রাখা হোক যারা কাজ করতে জানে।

বিদ্যালয় সংক্রান্ত
৭. বিশ্বভারতীকে এমন সাহায্য করা দরকার যাতে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের সুবিধা বা সুযোগ সে পায়। কিন্তু একই সঙ্গে  একে রক্ষা করা প্রয়োজন গতানুগতিকতা, আঞ্চলিকতা, এত্যাদি থেকে, এবং পণ্ডিত নেহরুর চিন্তানুযায়ী বিশ্বভারতীর নিত্যনৈমিত্তিক ও ধারাবাহিক ক্ষয় থেকে।
বিশ্বভারতীর সাহায্যার্থে এখন দরকার downsizing, এবং অকাজের লোকদের সরানোর। এটাই প্রধান কাজ।

৮ ছাত্র ভরতি করার পদ্ধতিকে স্বচ্ছ করতে হবে।
এ বিষয়ে যা শুনেছি তা হল নিজেদের লোকেদের ঢোকানো হয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও অন্যান্য বিছার এড়িয়ে। এটা বন্ধ করার জন্য বলিষ্ঠ পদ নেওয়া প্রয়োজন।

৯ আসেপাসে আরও কেন্দ্রীয় ও নবদয় বিদ্যালয় খোলা দরকার স্থানীয় ছেলেদের জন্য যারা বাড়িতে থেকে আবাসিক ছাত্র হিসেবে শিক্ষালাভ করতে ইচ্ছুক। একই ভাবে রাজ্য সরকারের প্রয়োজন এই অঞ্চলে রাজ্য সরকার চালিত কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষায়তনের জাল প্রসারিত করা স্থানীয় চাহিদা মেটাতে। এই দুই প্রথাতে বিশ্বভারতী নিজ পাঠশালা ও মহাবিদ্যালয়ের সংখ্যার নিয়ন্ত্রণের অসাধ্য বৃদ্ধি থেকে রক্ষা পাবে এবং একই সঙ্গে স্থানীয় নাগরিকদের শিক্ষালাভের অধিকারও পূরণ হবে।
এই কাজ খুব দরকার এবং তাড়াতাড়ি দরকার - এই নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে আবেদন করা উচিত।

১০ বর্তমান অনার্স ও মাস্টার্স মাত্রার শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়াও, পাঁচ বছরের সংহত পাঠব্য্বস্থা ও বিষয়ের পরিকল্পনা করা দরকার। বিশ্ব-ভারতীর আরও নতুন বিষয়ে দক্ষ অধ্যাপক ও পণ্ডিতদের আনা উচিত যারা নতুন কাঠামো শিক্ষার কাঠামে তৈরি করবে শান্তিনিকেতনে।
এই বিষয়ে কিছু বলার নেই।
শ্রীনিকেতন
১১‍. শ্রীনিকেতন যেন আসেপাসের গ্রামাঞ্চলের মানুষদের সঙ্গে উদ্ভাবক ও প্রগতিশীল আদান-প্রদানের এক যথার্থ মাধ্যম হয়, এবং সেই মাধ্যম অনুযায়ী শ্রীনিকেতন পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলির উন্নয়ন ও অগ্রগতির সহায়ক হয়।
এই বিষয়ে এত কম লেখা হয়েছে, যেন অনুচিন্তনের প্রতীক - নেহাতই লিখতে হবে তাই লেখা। শ্রীনিকেতনের কার্যকলাপ বিশ্বভারতী স্থাপনের এক প্রধান কারণ। তার সঙ্গে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকেদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকা ছিল রবীন্দ্রনাথের অভিপ্রায় এবং তার পেছনে এক বৃহত সামাজিক কারণ আছে, আছে ছাত্রদের চরিত্রগঠনমূলক অভিপ্রায়। শ্রীনিকেতনের উন্নয়নের আবশ্যকতার সঙ্গে বিশ্বভারতীর কর্তব্য ওতপ্রত ভাবে জড়িত, এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের সঙ্গে শ্রীনিকেতনের কর্তব্য তেমনিই ওতপ্রত ভাবে জড়িত।

১২. শ্রীনিকেতনের কৃষিবিদ্যালয় যেন কৃষি শাস্ত্রে দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষানুষ্ঠানগুলির অন্্যতম হয়।
এই সুপারিশ কি wish list না উপদেশ, না সরকারের কাছে আবেদন, না নিজেদের কাজ করা হয়নি তার স্বীকৃতি? কৃষিশাত্রে বা যে কোনো বিষয়ে শিক্ষার মান কতটা উঁচুতে উঠবে, না নিচুতে থাকবে, তার দায়িত্ব বিশ্বভারতীর হওয়া উচিত, সরকারের নয়। কৃষি বিদ্যার মান - অন্যান্য সব বিদ্যার মতই, নির্ভর করবে তাঁর শিক্ষক ও প্রশাসকদের চেষ্টা, নিষ্ঠা, গবেষণার ওপর।  এমন যেন না হয় যে এই সুপারিশের তালিকা ব্যবহার করা হোক এমন ভাবে যে বিশ্বভারতীর উন্নতি নামে শুধু সরকারের কাছে দাবিই থাকবে, কিন্তু লোকেদের নিষ্ঠা ও কাজের দায়িত্বর উল্লেখ থাকবে না।

প্রশাসন ও আর্থিক শৃঙ্খলা

১৩. বিশ্বভারতী কার্যক্রমে আবৃত্ত আয়ব্যয়ককের শতকরা কুড়ি ভাগ অর্থ ব্যয় করার চেষ্টা করবে বিশ্বভারতী উন্নয়নতালিকার কাঝ এগোতে।
একটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন - শতকরা কুড়ি ভাগ না দশ ভাগ খরচ করা হবে উন্নতিকরণের পেছনে তার ওপর অধিক গুরুত্ব না দিয়ে দেওয়া উচিত অর্থ যেন অপচয় না করা হয়, চুরি না করা হয়, এবং উন্নতির নামে বিকৃত যুক্তি দেখিয়ে ভুল কাজে বা ভুল ভাবে অর্থের অপচয় না হয়।

১৪. একটি নতুন পোস্ট, Pro-Vice Chancellor’এর তৈরি করে উপযুক্ত ব্যক্তিকে ভার দেওয়া হোক।
এটা করা হয়ে গেছে।

১৫. Proctor’এর দপ্তর আবার সক্রিয় করা উচিত।
এই ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই, বক্তব্যও নেই।
-------------------------------------------------------------

এরই সঙ্গে হয়তো দরকার বিশ্বভারতীর মূল কর্তব্যগুলি পরিষ্কার ভাবে হেঁয়ালি ছাড়া লেখা যায় কিনা তার চেষ্টা করতে। লীনাদির মনে হয় ভারতবর্ষের সাংবিধানিক intellectual property rights’এর ওপর যে সুন্দর ধারা  আছে, যা লীনা দির মনে হয় হয়তো পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠের অন্যতম। যদি তা ব্যবহার করা যায় তবে হয়তো সেই ব্যবস্থা অনুযায়ী বিশ্ব-ভারতীর জীবন্ত dynamic সৃষ্টি বিশ্ব-ভারতী শিক্ষানুষ্ঠানও তাঁর intellectual property’র মধ্যে পড়ে।  এই বিষয়ে খুঁতিয়ে দেখার সময় এসেছে। সেই property right আজ exercise করা যায় কিনা দেখা দরকার। লীনা দির ধারনা যায়।
বিশ্বভারতী act ১৯৫১ সালের এবং তার ১০৬০, ১৯৭১ ও ১৯৮৪’এর amendment’ও দেখা হয়েছে। চিন্তা করা হ’ল কি করা যায় এখানে, নাগরিক হিসেবে বা প্রাক্তনী হিসেবে। এই act’কে সংশোধন করা, বা বাতিল করা, বা এতে আরও কিছু দফা যুক্ত করা। নতুন দফা যদি যুক্ত করতে হয়, তবে তার পাঠ বা লিপি কি হবে, কে লিখবে?
ভাবলাম আমাদেরই উচিত এটা লেখা এবং সরকারের দৃষ্ঠি আকর্ষণ করা। শুধু বসে বসে অন্য লোককে নিন্দা না করে, নিজের ক্ষমতা ও বিচার অনুযায়ী, নিঃস্বার্থ ভাবে, যা সম্ভব তাই করা।
কিন্তু, ওপরের পনের টা সুপারিশ বার বার পড়ে, এবং চিন্তা করে, মনের মধ্যে একটা খটকা লাগছে - এই তালিকাটি সম্পূর্ণ নয় বলে। এই তালিকাতে যা আছে এবং যেমন ভাবে তা স্ফুরিত বা ব্যক্ত, তাতে মনে হয় অনেক দরকারি যুক্তি না বলা থেকে গেছে।
সুতরাং, HLC রিপোর্টের সুপারিশ তালিকার ওপর আমার মন্তব্য ছাড়াও, কতগুলি অত্যাবশ্যক যুক্তি ও বিচারও আলাদা করে লেখা প্রয়োজন মনে করি, এবং সেটা এই ব্লগের শেষে লিখবো আসচে দিন কয়েকের মধ্যে।
শুরুতেই যা লেখা দরকার তা হ’ল, বিশ্বভারতীর মূল লক্ষ ও উদ্দেশ্যর সংক্ষিপ্ত তালিকা। বিশ্বভারতী কেন করা হয়েছিল এবং তার মূল কর্তব্য কি - সেটা মনে হয় অনেকের মনেই হেঁয়ালি আছে। আমি আমার বুদ্ধি অনুযায়ী বিশ্বভারতীর কর্মতালিকাতে তিনটি পদ লিখেছিলাম। তান লী দা তাতে একটি আরও যোগ করেন, চার নম্বর।
সেগুলো এবং তারই সঙ্গে আমাদের সুপারিশ, বিশ্বভারতী ও রবীন্দ্রশিক্ষা চিন্তা রক্ষা করার ও তার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও লিখবো এখানে - একে একে।
আপনাদের বক্তব্য শোনার ইচ্ছে রইল। লিখতে অনুরোধ জানাচ্ছি এই ব্লগের তলায়। আমায় যদি email  করতে চান - tonu@me.com



এবার HLC রিপোর্ট ছেড়ে - লিখছি বিশ্বভারতীর পরিচয়, এবং কর্তব্য কি হওয়া উচিত, সে বিষযে আমার মত।

বিশ্বভারতীর পরিচয়
বিশ্বভারতী এমন একটি শিক্ষাকেন্দ্র যেখানে ছাত্র, শিক্ষক, বাসিন্দা ও পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চলের লোকেরা একে অন্যের জীবন সম্পর্কে সচেতন ও তাদের সুখদুঃখের  অংশীদার হবেন, এবং সন্মিলিত ভাবে সমাজকে অগ্রসর করার দায়িত্ব শিখবেন, এবং তারই সঙ্গে নিজেদের পেশা, জীবিকা, কারুশিল্প, শিক্ষার উন্নতিসাধনে রত হবে।

বিশ্বভারতীর কর্তব্য
  1. এক - বিশ্বভারতী দেশের সবধারার সংস্কৃতিকে গবেষণা করে জাতির গূঢ জীবনীশ্রোতকে জানার ব্যবস্থা করবে। তার জন্য বৈদিক, পৌরানিক, বৌদ্ধ, জৈন, মুসলমান প্রভৃতি ধর্মচিন্তা এবং তার সঙ্গে আদিবাসী জীবনচিন্তা গবেষণা করে তাদের সমস্ত সত্বার সন্মিলনে সারা ভারতবর্ষের প্রাণের ধারা কোন দিকে প্রবাহিত হচ্ছে তা জানবে, এবং সেই ভাবে নানা বিভাগ ও বৈচিত্রের মধ্যে দেশের ও সমাজের সমগ্রতা উপলব্ধি করায় ব্রত হবে - সেই শিক্ষায় বিশ্বভারতীর ছাত্ররা দেশকে সম্পূর্ণরুপে জানতে, বুঝতে শিখবে এবং সেই সমাজবিজ্ঞানের পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য অর্জিত বিদ্যা কিভাবে দেশ ও সমাজের উন্নতির জন্য প্রয়োগ করা যায় যাথাযত ভাবতে পারবে।
  2. দুই - নতুন বিদ্যা উৎপাদন হবে বিশ্বভারতীর মুখ্য বা প্রধান কর্তব্য।  সে শিক্ষা দান করা বা হবে দ্বিতীয় পর্য়ায়ভুক্ত, বা গৌন, কর্তব্য। বিশ্বভারতী তেমন মনীষীদের আকর্ষণ করবে, আহ্বান করবে, যারা নিজেদের সাধনা, প্রভা দ্বারা নতুন বিদ্যার অনুসন্ধান ও আবিষ্কারের কাজে নিযুক্ত ও নিবিষ্ট আছেন। এরকম মনীষীদের বিশ্বভারতীতে একত্র করে এমন পরিবেশ গঠন করা হবে যা স্বভাবতই নতুন জ্ঞানের উৎস হবে এবং তার দ্বারা প্রভাবিত বিশ্ববিদ্যালয় শেখা বিদ্যার ওপর নব্য দর্শন, আবিষ্কার ও চেতনাকে সংযুক্ত করে দেশের জ্ঞানভাণ্ডারকে ক্রমাগত সমৃদ্ধ করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন দিগন্তের নতুন যুগের উপযোগী নতুন শাস্ত্র তৈরির কাজে সর্বদা নিযুক্ত রাখবে। এরই পরের বৃহত ধাপ হ’ল শুধু দেশেরই নয়, সারা প্রাচ‍্যের ও প্রাশ্চাতে‍্যর, তথা সমগ্র পৃথিবীর মানবচেতনার মূল উৎস সন্ধানের গবেষণায় রত হবে, ঠিক ঠিক মনীষীদের আকর্ষণ করার চেষ্টায় বিশ্বভারতী ব্রত থাকবে এবং এমন পরিবেশের সৃষ্টি ও রক্ষণ করবে যাতে আশ্রম যেন এক জগতব‍্যাপ্ত চুম্বকের ন‍্যায় সমস্ত পৃথিবীর নববিদ্যাসৃষ্টির অন্যতম কেন্দ্র ও তীর্থস্থান হয়।
  3. তিন - বিশ্বভারতীতে গঠিত ও বণ্টিত বিদ্যা এমন যেন না হয় যে তা বিদেশে অর্জিত বিদ্যার বিকৃত অনুলিপি মাত্র এবং শুধুই মধ্যবিত্ত সমাজের কেরানিগিরির উপযোগী মুখস্ত শিক্ষা। এই বিদ্যালয়ে আবিষ্কৃত বিদ্যা এমন হবে যা সরাসরি আসেপাশের গ্রামাঞ্চলের লোকেদের ও প্রকৃতির মান উন্নয়নের সহায় হবে। এইরুপ বিদ্যা আবিষ্কার হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম মুখ্য কর্তব্য। এরই সঙ্গে, মধ্যবিত্ত ও উচ্চ শ্রেনীর ভদ্রলোক ও ধনীদের ভেতর যে নিচু জাতির বা গরিব ও দুর্বল জাতিদের প্রতি  ঘোর অবজ্ঞা আছে, তা মন থেকে ও জীবন থেকে  দূরীকরণ হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম লক্ষ, এবং এই প্রতিষ্ঠানের সবাই যেন নিজেদের জীবনের উদাহরণ স্বরুপ বহির্জগতের লোকেদের প্রভাবিত করাবে। এই বিদ‍্যালাভে ছাত্ররা যেন দেশকে ভালবাসতে শেখে এবং দেশের মঙ্গলে কাজে নামতে শেখে। দেশ থেকে দলে দলে পালিয়ে অন‍্যরাজে‍্য আশ্রয়ার্থী হয়ে দিন কাটানোর প্রচেষ্টাই যেন এই শিক্ষার মূল প্রযোজ্য পরিনাম না হয়।
  4. নাচ, গান, চিত্রকলা ও এইপ্রকার নানান সৃজনীশক্তি প্রকাশের রাস্তা খোলা রাখা বিদ্যালয়ের অন্যতম কর্তব্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূুল কর্তব্যগুলির বিকাশ ও সাধন উপলক্ষে নানান সাংসকৃতিক অনুষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে - তাকে বজায় রাখতে এই গান, নাচ, চিত্রকলার উতকৃষ্ট ব্যাবহার করা হবে - এবং এই অনুষ্ঠানগুলিকে শুধুমাত্র প্রমোদানুষ্ঠান হিসেবে অভিব্যক্ত না করে, সমাজে তার প্রয়োজনীয়তা কি, তার উপলব্ধি ও প্রচার হবে অন্যতম মূুল লক্ষ। এই জন্য এই সব অনুষ্ঠানে সারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণের প্রয়োজন। শ্রীনিকেতনের অনুষ্ঠান যদি শুধু শ্রীনিকেতনের লোকেরাই করে এবং বাকিরা যদি তা দেখতেও না যায়, বা তাতে অংশগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ না করে - যদি সেটা নেহাতই একটি ছুটির দিন মাত্র হয়, বা বড়জোর কয়েক ঘণ্টার নাচ গানের জলসা হিসেভে ধরা হয়, যা সহরের মঞ্চের বদলে গ্রামের মুক্তাঙ্গনে পেশ করা হচ্ছে - তাহলে সে অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। নৃত্য, গীত, চিত্রকলা যে শুধু শেখানোই হবে তা নয় - এই কলাশাস্ত্র আঠা স্বরুপ সারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র, শিক্ষক কর্মচারি, সব বিভাগকে একত্র রাখবে ও একে অন্যের কাজে সহায়তা করতে শেখাবে।
এই ভাবে বিশ্বভারতীর আদর্শ রক্ষা করা যায়, এবং এই ছোট তালিকা বিশ্বভারতীর সংক্ষিপ্ত পথনির্দেশক সূত্র হতে পারে





লিখেছিনু রামহনু নামতনু

Thursday, August 4, 2011

রবীন্দ্রনাথের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সমিতি চেষ্টার বিফলতা জন্য আমরা দায়ী


বৃহস্পতিবার, আগস্ট মাসের চার তারিখ, সাল ২০১১
কালীমোহনের কাজের কথা লিখতে গিয়ে ঘুরে ঘুরে চিন্তা ফিরে আসছে কেন রবীন্দ্রনাথের সমাজ প্রতিকার ও দেশোন্নতির প্রধান চেষ্টা সংশ্লিষ্ঠ বড় বড় কাজগুলি ব্যর্থ হয়।  পেশাদারী ইতিবৃত্তকাররা, যারা Historian নামে আজ স্বীকৃতি পান, তাঁরা লিখবেন রবীন্দ্রনাথ কি বৃহৎ কর্মযোজ্ঞে নেমেছিলেন, শিলাইদহ, পতিসর এবং পরে শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতনে, এই নিয়ে। অনেক লেখা হয়েছে, আরও অবশ‍্যই হবে। তার জন্য আমার মত আনাড়ি লেখকের দরকার করবে না। কিন্তু যা সম্বন্ধে হয়তো যথেষ্ট লেখা হয়নি, সেটা হল রবীন্দ্রনাথের ঔসব যুগান্তকারী অভিপ্রায় ও প্রচেষ্টা যে শান্তিনিকেতনে বিফল হয়েছে তার যথার্থ স্বীকৃতি এবং কেন বিফল হয়েছে তার সমীকরণ।
তাই, পণ্ডিতদের হাতে ইতিহাস ছেড়ে দিয়ে, ভাবছি নিজেদের চরিত্রগত ন্যুনতা, যা মনে করি এই অসাফল্যে প্রধান কারণ, তা নিয়ে আরও তদন্ত ও লেখা। একশো বছর ধরে জত্ন করে আমরা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গান ও নাটক করেছি, বক্তৃতা দিয়েছি, রচনা লিখেছি, নানা যায়গায় আমাদের উচ্চমানের সাংস্কৃতিক চেতনার প্রদর্শনী করে হাততালি কুড়িয়েছি এবং দুটো পয়সা করেছি সুযোগ মত - এবং মনে করেছি আমরা হলাম শান্তিনিকেতনের সার্থক স্নাতক। সেই আমরাই সবচেয়ে বেশি দায়ী রবীন্দ্র-প্রকল্প ব‍্যর্থতার জন‍্য।
দায়ী আমরা সবাই, বাংলা সমাজ এবং ভারতবর্ষ। কিন্তু তাদের সবার মধ্যে সর্বাধিক দায়ী হলেন তাঁরা, যাঁরা রবীন্দ্রনাথকে পড়াশোনা করেছেন, জানবার সুযোগ পেয়েছেন, এবং তাঁরই করা শান্তিনিকেতনের ছত্রছায়ায় বড় হয়েছেন বা চাকুরি জীবন কাটিয়েছেন।
আমার চিন্তা রবীন্দ্রনাথ, কালীমোহন, এলমহার্স্টকে ছেড়ে এই রবীন্দ্রচেষ্টার অপহন্তাদলের ওপর, যাঁরা রবীন্দ্রনাথ বেচে খাওয়া পেশা হিসেবে নিয়েছেন অথচ সেই রবীন্দ্রনাথেরই প্রচেষ্টাকে অপমান করে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কর্মযোজ্ঞে জল ঢেলে তাঁর মাথার ঘাম পায়ে ফেলা চেষ্টা ও সব নিজস্ব পুঁজি ঢেলে দিয়ে তৈরি বাগানকে মরুভুমিতে পরিনত করে চার দিকে বক্তৃতা দিয়ে বেড়িয়ে নাম কিনে বেড়াচ্ছেন।
আমার মনে হয় আমাদের এই সভ্যতা-ধ্বংসক অক্ষমতা ও অযত্নের বিশ্লেষণ করে বেশ কয়েকটা মহাভারত রামায়ন লেখা যায়। আমি বাল্মীকি নই, কৃত্তিবাসও নই। তা হলেও, মনে করি এবিষয়ে চিন্তা করার দরকার আছে, সত্যকে স্বীকার করলে তবেই তার থেকে এগিয়ে যাওয়া যায় এবং ত্রুটি স্বীকার করলে তবেই তার সংশোধন সম্ভব হয়। সত্যকে কবর দিয়ে কৃত্রিম রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে আর টেলিভিশনে দেখাবার জন্য মাঠে ভুয়ো ‘খোল দ্বার খোল’ যাত্রা সহকারে সস্তা নাটক করা যায় - কিন্তু তাতে রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন বৃথা হয়।
কালীমোহন ঘোষ সম্বন্ধে লিখবো ভাবছিলাম - কারণ অনেকে বলছেন। তারই মধ্যে আমাকে আসচে মাসের  World Poetry Reading দলের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের পল্লী উন্নয়নচেষ্টা সম্বন্ধে একটা বলতে হবে। এই সব নানা কারণে আমি নানা বই আবার ঘাঁটতে শুরু করি। যেমন, ধরুন - 
  1. শ্রেয়সী পত্রিকার ৭ই পৌষ ১৩৯৭, ৭ম সংখ্যা। তার সামনের পৃষ্ঠাতে মার নিজের হাতে লেখা - “তনুকে - মা। আমার বাবা কেমন ছিলেন সেটা আমি লিখেছি এখানে। তোদের জ্ঞাত করার জন্য পাঠালাম - ১.১.৯১।” বিষয় সূচীর প্রথম প্রবন্ধই হল “পিতা কালীমোহন ঘোষ”, লিখেছেন শ্রীমতি সুজাতা মিত্র। এছাড়া আছে বেশ কিছু বই ও পত্রিকা যেমন - 
  2. Centenary Volume - L.K. Elmhirst, Edited by Manjula Bose.
  3. Rural Reconstruction and Rabindranath, by Chittabrata Palit, Manimanjari Mitra, Keya Bannerjee
  4. রবীন্দ্রনাথের লেখা প্রবন্ধ - শিক্ষার হেরফের, শিক্ষাসমস্যা, জাতীয় বিদ্যালয়
  5. Introduction to Tagore, by Visva-Bharati, 1982, যাতে রবীন্দ্রনাথের স্বরচিত অনেক লেখা আছে, যেমন,‘Education for rural India’, কিন্তু ইংরিজিতে, এবং শেষের দিকে আছে একটি প্রবন্ধ -  Santiniketan and Sriniketan, লিখেছেন উমা দাসগুপ্তা।
  6. Rabindranath Tagore, a Biography - Oxford University Press লিখেছেন উমা দাসগুপ্তা।
  7. Tagore (Oxford India Series) - লিখেছেন উমা দাসগুপ্তা।
  8. Rabindranath Tagore - my life in my words - লিখেছেন উমা দাসগুপ্তা।
  9. রবীন্দ্রনাথের নিজের লেখা The religion of man
  10. রবীন্দ্রনাথের নিজের লেখা Sadhana, the Realization of life
  11. Asian Ideas of East and West - Tagore and his critics in Japan, China and India - লিখেছেন Stephen Hay.
  12. প্রশান্তকুমার পালের নয় খণ্ড রবিজীবনী
  13. Andrew Robinson ও Krishna Dutta’এর লেখা Rabindranath Tagore, The Myriad Minded Man
  14. Visva-Bharati News’এর কিছু কপি।
  15. Imperfect Encounter - Mary Lago’র লেখা
  16. তপতি দাসগুপ্তার লেখা - Social Thoughts of Rabindranath Tagore
  17. Edward Thomson’এর Rabindranath Tagore : His Life and Work
  18. অরুণ মজুমদারের লেখা - রবীন্দ্রনাঘ ও বাঙালি মধ্যবিত্ত মন
  19. ডঃ সাইফুদ্দিন চৌধুরির লেখা - পতিসরে রবীন্দ্রনাথ
  20. সুতপা ভট্টাচার্যের রবীন্দ্র-সাহিত্যে নারীমুক্তি ভাবনার ওপর লেখা - সে নহি নহি
  21.  -----  ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

উল্টে পাল্টে দেখার সময় মনে হয় - দূর ছাই, সবাই তো প্রচুর লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে। কিন্তু তাঁর প্রচেষ্টা যে আমাদের অপদার্থতার কারণে ব্যর্থ হচ্ছে সেটা তো দেখছি অধিকাংশ ক্ষেত্রে লেখক লেখিকাদের বক্তব্যের বাইরে! এমনকি, এক সূত্রের সন্ধানে’র প্রথম খণ্ডটা আবার নেড়ে চেড়ে দেখছিলাম - অন্নদাশঙ্কর রায়, তান লী দা, আমার মা, লীনা দি, ভেল্টু দা, সত্যজিত রায়, রামাচন্দ্রন, মিষ্টুনি দি, উমা দাসগুপ্তা, অমর্ত্য সেন প্রমুখের কত লেখা। লেখাগুলো যত পড়ছি আবার করে, আমার মনের ধারনাটা ততই দৃড় হচ্ছে আমার কি বিষয়ে লেখা উচিত সেই নিয়ে। 
শেষে তান লী দাকে ফোন করলাম। লীনা দি রবীন্দ্রনাথের নারীমুক্তি নিয়ে লিখবেন ও পড়বেন World Poetry Reading’এ। তাই নিয়ে জোর পড়াশোনা চলছে। তারই মধ্যে তাঁদর বাড়িতে এখন অতিথি আসবেন কিছুদিন থাকার জন্য নানা দূর শহর থেকে। তান লী দা’ও রবীন্দ্রনাথের ছোট্ট পরিচিতি লিখে ফেলেছেন - কিন্তু পরের লেখাটা - ওনার Universalism নিয়ে একটু চিন্তিত আছেন। আমি তান লী দাকে সতর্ক করেছিলাম যে রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞরা এই একটা ব্যাপারে পরিষ্কার ভাবে ব্যাখ্যা করার বদলে প্রায়ই অস্পষ্ট হেঁয়ালির মত অনেক কিছু বলেন যাতে শ্রোতাদের মনে ধাঁধা থেকে যায় এই নিয়ে। আমার অনুরোধ ছিল তিনি যেন এইটার ধাঁধাটা শ্রোতাদের মনথেকে কাটিয়ে দেন। কথাটা মনে হয় তান লী দার মনে ধরেছে, এবং এই নিয়ে নানা বই পত্র ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করেছেন।
তান লী দা আবার এক সূত্রের সন্ধানে বইটির দ্বিতীয় খণ্ড বার পরতে চান এবং আমাকে বলেছেন একটা লেখা দিতে। আজ তান লী দাকে বললুম যে এবার মনের মধ্যে এক বক্তব্যটি পাকা হচ্ছে - কিন্তু সেটা কিঞ্চিত বিতর্কমূলক হতে পারে - যাকে ইংরেজা বলে controversial । রবীব্দ্রনাথ বা শান্তিনিকেতনের স্মৃতিচারণ না করে, আমি লিখতে চাই আমাদের - মানে রবীন্দ্রনাথের পরের প্রজন্মগুলির শান্তিনিকেতনবাসীদের সর্বনাশা ব্যর্থতা,। আমরা রবীন্দ্রনাথের দেশোন্নতির ও সমাজোন্নতির বৃহত কাজগুলিকে চোখের সামনে অবহেলা করে বন্ধ হতে দিয়েছি। এই অপরাধী বোধটা আমার শেষ বয়সে এসেছে, এর আগে ভাবিইনি। কিন্তু এখন যতই ভাবছি, ততই মনে হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজগুলি তাঁর লিখিত রচনার বাইরে - এবং সেই কাজগুলি এতদিনেও অসম্পূর্ণ থেকে গেছে।সে কাজগুলোতে পুনরূজ্জীবন আনা প্রয়োজন। আমাদের অনাদরে যে শ্রোত মরুভুমিতে শুকিয়ে গেছে, তাতে আবার শ্রোত আনতে গেলে প্রথমে শ্বীকার করা দরকার যে আমরা রবীন্দ্রনাথের সত্যিকারের উত্কৃষ্ট কাজগুলোতে সাহায্য করিনি, এগিয়ে আসিনি, এবং এতে আমরা দেশের, দশের ক্ষতি করেছি। একবার গাফিলতি শ্বীকার করলে, হয়তো বা তার সুরাহাও করা সম্ভব হবে এক দিন।
মজার ব্যাপার এই যে, রবীন্দ্রনাথ যেসব কাজ নিযেই সম্পূর্ণ করে গেছেন, সেগুলি হল তাঁর সৃজনী সাহিত্য - গদ্য, পদ্য, নৃত্যনাট্য ইত্যাদি। সেগুলির সম্পূর্ণতা গুরুদেবের নিজের ক্ষমতার মধ্যে ছিল তাই নিজেই সেগুলি শেষ করে গেছেন - শুধু তার অধিকারকভাগদেয়, বা royalty, তিনি নিজের বাড়ির লোকদের না দিয়ে বিশ্ব-ভারতীকে দিয়ে জান। এর পর থেকে বিশ্ব-ভারতী সেই সব গান, নাটকের পুনরাবৃত্তি করেছে, এবং ধীরে ধীরে তার বহিরাগত জাঁকজমক বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা হারিয়েছে, এবং কেন এই গান, নাচ, নাটক, অনুষ্ঠান তৈরি করা হয়েছিল তা ভুলেছে।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রচেষ্টা তাঁর লিপিবধ্য স্থির, নিশ্চল সাহিত্য নয়, যার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ, প্রগতিশীল, চিরগতিশীল, জীবন্ত সৃষ্টি ছিল আমাদের দুর্ভাগা দেশের মলিনতা দূর করার কাজে নামা। দেশের ও সমাজের দারিদ্র, জাতি ও গোষ্টীগত অন্যায়, হীনমন্যতা ও চারিত্রিক ক্ষুদ্রতা ও আত্মপরতা - এইগুলোর মূল কারণ খোঁজা এবং তাদের নির্মূল করা। কিন্তু সেকাজ একদিনের নয় - একজন লোকেরও নয়। সেকাজ চিরকালের, এবং সবার একত্র হয়ে করার। তিনি আশা করেছিলেন যে দেশবাসীর সবাইকে যদি একথা সেখানো না যায়, অন্ততঃ বিশ্ব-ভারতীর শিক্ষক, কর্মী, ছাত্ররা সে শিক্ষা পাবে এবং আসেপাসের কিছু গ্রামে অন্ততঃ প্রগতির হাওয়া বইবে, যা হয়তো বা ভবিস্যতকালে ছড়াতে পারবে আরও বৃহত পরিমণ্ডলে।
রবীন্দ্রনাথ দেখেছেন বাঙালি সহুরে মধ্যবিত্তদের গ্রামবাসীদের নিচুপদে ভাবা এবং জাতিগত ঔদ্ধত্ববোধ, চেষ্টা করেছেন তা থেকে শান্তিনিকেতনের লোকদের মুক্ত রাখতে এবং হতাশা প্রকাশ করেছেন নানা লেখায়। তিনি স্নাতকদের কাছ থেকে কি আশা করেছেন তা লিখেও গেছেন। অথচ, সেই নিয়ে প্রাক্তনীদের বিশেষ মাথাব্যথা দেখিনি। রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ফলদায়ক, উত্পাদনক্ষম প্রচেষ্টা যা সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সবার হাতলাগানো সামাজিক  কর্মসূচী হওয়া  উচিত ছিল, তাকে আমরা বিনষ্ট করেছি। এখানে আমাদের নিজেকে কাজ করতে হবে, ছোটলোকদের সঙ্গে মিশতে হবে, অন্যের সুবিধার জন্য স্রম দিতে হবে, এবং তা আমরা করতে এখনও রাজি না, দেশের জন্যই করতে রাজি না, রবীন্দ্রনাথের জন্য কেন করব?
এই চিন্তার ভিত্তিতে লিখবো ভাবছি।
তনু

Wednesday, August 3, 2011

সব কি ইংরিজিতে না লিখলেই নয় ?


নমষ্কার। শুরু করেছিলাম ব্লগ লেখা জুন মাসের শেষের যিকে, এবং উতসাহ প্রথমে যায় সন্ন্যাসী বিদ্রোহ এবং দেবী চৌধুরানীর দিকে। কিন্তু এই দেড় মাসে লেখার মোড় অনেকবার ঘুরেছে। পাঠকরা বলবেন আমার লেখাতে সামঞ্জস্যের অভাব - এবং ঠিকই বলবেন।

তবে যে কঝন মোটামুটি মন দিয়ে পড়েছেন কিছু কিছু ব্লগের লেখা, তাঁরা হয়তো একটি প্রবণতা বা ট্রেন্ড দেখতে পাবেন - যেমন ক্রমশ বাংলাতে লেখার ঝোঁক দেখা যায়, এবং তারই সঙ্গে বাংলার বাক্য প্রয়োগে কিছুটা স্বচ্ছলতা অাসছে অভ্যেস বসতঃ। আরেকটি প্রবণতা হল - অতিতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানের দিকে এবং ভবিষ্যতের কথা বলারও সমান ইচ্ছে। আাবার এও কেউ কেউ বলবেন হয়তো, যে ঘরের ছেলে ঘরে ফেরার মত, ঘুরে ফিরেই রবীন্দ্রনাথের বিষয়ে এবং তারই সঙ্গে বিশ্বভারতীর াতিত-ভবিষ্যত চিন্তা আমার মনে এবং কলমে (keyboard’এ বলাটা আরও সঙ্গত হবে) চলে আসছে।

By Sukhamoy Mitra
কিন্তু আজকের লেখার ইন্ধনটা এসেছে লীনা দি ও পিয়ালির নিরীক্ষা থেকে - ইংরিজিতে লিখবো না বাংলাতে, সেই বিষয়ে। লিখেছিলাম বিশ্বভারতীর আগামী উপাচার্য নির্বাচন নিয়ে। তারই সঙ্গে আমরা প্রাক্তনীরা, যারা দুই তিন প্রজন্ম বিশেষ কিছুই করিনি বিশ্বভারতীর পুনরূজ্জীবন-চেষ্টায়, তাদের কি এই বিলম্বিত লয়ে এই উপেক্ষিত শুভকাজে যোগ দেবার সম্ভাবনা আছে কিনা - এই চিন্তা মাথায় এসেছিল। সেই চিন্তা ফুটেছিল, আমারই অদ্ভুত ও বিশেষ রচনাভঙ্গিতে - বাংলায়। মাথায় যে সব সময় সব চিন্তা গুছিয়ে গুরু থেকে লঘুপদ ক্রমানুশারে আসে, তা নয়। এবং সব ধারণাই যে ঠিক, তাঔ নিশ্চই নয় - কিন্তু তাও, যেমন মাথায় এসেছে, তেমনি লিখে ফেলেছি এবং তুলে দিয়েছি সবাই চাইলে দেখতে পায় এমন স্থানে - গুগল ব্লগে।

সেটা পড়েই লীনা দি বলেছিলেন, তান লী দাও, এটা ইংরিজিতে অনুবাদ করলে ভাল হয়, অনেক বেশি লোকে পড়তে পারবে। আমি ইংরিজিতে অনুবাদ করে দিয়েছি, এই লেখার আগেরটাই। কিন্তু তারই সঙ্গে লীনাদিদের এটাও প্রশ্ন করেছিলাম - কি হবে ইংরিজিতে লিখে, বেশি লোককে দেখিয়ে। পরে, তা নিয়ে ফেসবুকের পাতাতেও আমার মন্তব্য লিখেছিলাম। আজ ভাবছি তাই নিয়েই এখানে লিখবো।

ইংরিজিতে আমরা কেন লিখি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে, বাংলা সংস্কৃতিকে নিয়ে, বিশ্বভারতীকে নিয় - এটা আমার আজকের প্রশ্ন। কি দরকার আছে রবীন্দ্রনাথের সমাচিন্তা, যা বেশির ভাগই সখনকার বৃহত্তর বাংলাদেশকে নিয়ে লেখা, এবং ততকালীন অখণ্ড ভারতবর্ষকে নিয়ে লেখা। তিনি পাশ্চাত্যের সভ্যতার ওপর, বিশেষ করে তাদের  একদিকে স্বাদীনতা, গনতন্ত্র ও সাম্যবাদ নিয়ে দম্ভ এবং তারই সঙ্গে নিষ্ঠুর সাম্রাজ্যবাদ ও দূরদেের লোকেদের শোষণের পরস্পরবিরোধী প্রকাশ ও বিশ্বযুদ্ধ দেখে সভ্যতার ওপর আস্থা হারিয়েছিলেন - এবং সভ্যতা সংকট নিয়ে লিখেছিলেন। কিন্তু তা হলেও, উনি যতদূর জানি তাঁর সমাজ উন্নয়ন ও অাদর্শ শিক্ষার ভাবনা চিন্তা অখণ্ড ভারতবর্ষ সম্বন্ধেই ছিল। সুতরাং আমার প্রশ্নটা বার বার মনে আসে - সে বিষয়ে আজ যদি লিখতে চাই, কেন ইংরিজিতে লেখা দরকার ?

পাটক বলতে পারেন, রবীন্দ্রনাথতো নিজেও এসব নিয়ে প্রায়ই ইংরিজিতে লিখেছেন। কিন্তু সেই যুক্তি কি আমার বেলা খাটে? আমরা জানি রবীন্দ্রনাথকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বার বার দৌড়তে হয়েছে এখানে সেখানে, লিখতে, বক্তৃতা দিতে, টাকা তুলতে। তখনকার দিনে টাকা তোলার কয়েকটিই উপায় ছিল - দেশে রাজা রাজড়াদের ধরা, এবং ইংলণ্ড, আমেরিকাতে ইংরিজিতে ভাষণ দেওয়া এবং লেখা পেশ করা। সেই টাকা দিয়ে শান্তিনিকেতনের মত প্রতিষ্ঠান চালানো।

বর্তমানে, শান্তিনিকেতন চালানোর ভার ভারত সরকারের। সে আমাদের টাকার জন্য অপেক্ষা করছেনা। আমরা যদি নানা বিদেশি বিদ্যালয়ে গিয়ে বক্তৃতা দিই, এবং তার জন্য এক, পাঁচ বা দশ হাজার ডলার নিই এক ঘণ্টা কথা কথা বলার জন্য, সে টাকা আমরা সাধারণতঃ পকেটস্থ করি।

সুতরাং এটা কি বলা যায় যে - আজ রবীন্্রনাথের বিষয়ে ইংরিজিতে লেখার অন্যতম প্রধান ুদ্দেশ্য হল যে লেখক তার নিজের উপার্জন ও খ্যাতি কামনা ?

লীনা দি বলেন যে রবীন্দ্রনাথকে বিদশীরা তেমন চেনেনা, এবং আমাদের কর্তব্য হল তাঁর কথা বিদেশে প্রচার করা,  এবং টাকা পয়সা উপার্জনের চেষ্টা ছাড়াও, নিঃস্বার্থ ভাবে তা করা। লীনাদির যুক্তিটা বুঝি, কিন্তু তা হলেও পুরোপুরি মন থেকে মানতে অসুবিধা হয়। সাধারণতই আমার মনটা কিছুটা বিতর্কমূলক এবং কিছুটা বৈশ্লেষিক। কোনও উপদেশই অন্ধবৎ হজম করাটা স্বভাবে নেই। খুঁটিয়ে বিচার করাটা একটা বদভ্যেস বলা যায়।

প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে - shakespeare যে কত ভাল ভাল সাহিত্য রচনা করেছেন ইংরিজিতে। কই ইংরেজরাতো বাংলা বা হিন্দি শিখে তাঁর সাহিত্যের মর্জাদা আমাদের মাতৃভাষায় প্রমান করতে প্রাণপাত করছেননা বিশেষ? প্লুটো কি ভাবতেন বা গালিলিও কি আবিষ্কার করেন, দা ভিঞ্চি কিরকম ছবি আঁকতেন বা ভাস্কর্য সৃষ্টি করেছেন, মার্ক টোয়েন কেমন লিখতেন, এগুলোতো আমাদের ইংরিজি পড়েই জানতে হয়েছে। সুতরাং রবীন্দ্রনাথ যে এক অসাধারণ ব্যক্তি ছিলেন তাঁর প্রমাণও বিদেশীদের কেউ কেউ বাংলা পড়েই জেনেছেন। আমাদের দেশের লোকই যখন রবীন্দ্রনাথকপ ঠিক মত চেনেনা, তখন বিদেশীদের েপছনে অত দৌড়বার কি প্রয়োজন?

একটা কারণ অবশ্য আমরা নিজেরাই। দেশ ছেড়ে ধনমানের সন্ধানে আমরা অনেকেই বিদেশে বাস করি।  চাকরির ক্ষেত্রে ইংরিজিতে কথা বলি এবং লেখালিখি করি। একসময়ে, ইংরিজিতে কথা বলাটা জাতে ওঠার লক্ষণ ছিল। আজ, কলকাতাতে সমৃদ্ধ বাঙালিরা বাড়িতে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ইংরিজিতে কথা বলে। বাংলা তো গেঁয়োদের জন্য - অর্ধশিক্ষিত চাষাভুসোদের জন্য। সুতরাং আজকের নতুন প্রজন্মের উচ্চশিক্ষত তরুন তরুনীরা, বিশেষ করে যারা অনেক বছর বিদেশে আছে, তারা বাংলা অনেকে বলতেই পারেনা - লেখা তো দূরের কথা।

কিন্তু আমাদের সাংস্কৃতিক গর্বটা যায়নি। আমরা বাঙালি, রবীন্দ্রনাথের জাত - আর তাছাড়া, রবীন্দ্রনাথ, একশো পঞ্চাশ বছর বাদেও, একটি অক্ষয় স্বর্ণখনিবলে প্রমানিত হচ্ছেন - তাঁকে নিয়ে আজও লিখে হাততালি পাওয়া যায় কিছু সাহেবদের কাছে - সুতরাং কেন নয়?

রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার হেরফের’এ লিখেছেন যে বাংলা ভাষায় বেশি কিছু লেখা নেই বলে। ভাষার বিস্তার হয় ব্যবহারের সঙ্গে। যত লোকে নানা বিৎয়ে লিখবে ততই সে সাহিত্যের প্রসার হবে। সুতরাং, সমাজ দায়িত্য ছাড়াও, আমাদের মাতৃভাষা সম্পর্কিত একটা দাইত্যও আছে মনে করি। এবং রবীন্দ্রনাথের দূরদর্শিতা সম্বন্ধে যদি বিদেশীরা ওয়াকিবহাল না থাকেন, বাঙালি সম্প্রদায়ও তেমন কিছুই জানেন না - দুচারটি গান ছাড়া। আমরা যদি মনে করি তার সম্বন্ধে বলার আছে কিছু, বাংলাতেই বা বলি না কেন? আজকের দিনে তো তার শিক্ষা ও পল্লী উন্নয়ন চিন্তা আবার করে ানিবার্য ও অপরিহার্য মনে হচ্ছে - সারা বিশ্বের জন্য। তবে সেটা শুধু আমেরিকানদের জন্য না লিখে কয়েকবার বীরভুমের লোকদের জন্য লিখলে কি দোষ হয়?

আজকাল কাগজে পেনসিল বা কলম দিয়ে লোকে তেমন আর লেখেনা। একে অন্যকে ফোন করে, ই-মেল লেখে এবং Facebook ইত্যাদি আন্তর্জালীয় সংস্থান মানফত একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোত রাখে। হাতে কলমে লেখার অভ্যেস চলে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় - ইংরাজিটা এই সব নতুন মাধ্যমে সার্বজনীন ভাষা। সুতরাং লোকেরা ইংরাজিতে লেখা, কথা বলা, ভাবা, স্বপ্ন দেখাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বাংলা যদি প্রানে বাঁচে ভারতবর্ষে, তো মনে হয় গ্রাম বাংলার জন্যই বাঁচবে। শহরের উর্ধগামী মধবিত্ত সমাজে বাংলা শিগগিরিই হয়তো হাসপাতালে অন্তিম শয্যায় খাবি খাবে।
আরেকটা কথাও উল্লেখযোগ্য মনে করি। ইংরিজিতে তো অনেক পণ্ডিতই লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে। সেসব লেখা একত্র করলে পর্বতাকার স্তুপ হবে কাগজের। একথা নিশ্চিত বলা যায় যে তাঁর ওপর ভবিস্যতেও পর্বতপ্রমাণ লেখা ও বিশ্লেষণা আবার হবে। এত লেখালিখি করে, লাভটা কি হয়েছে, এবং কার হয়েছে? ভারতবর্ষ এখনও তাঁর মর্ম জানেনা, তার শিক্ষা ও সমাজচিন্তা জলাঞ্জলি গেছে শান্তিনিকেতনে। ভারতবর্ষ এখনও তার গ্রামকে বাঁচাবার রাস্তা খুঁজে পায়নি - না পেরেছে সবাইকে মনুষ্্যত্বের শিক্ষা দিতে, বা নিযেদের মধ্যে ভাগাভাগী মারপিট বন্ধ করতে। দেশের নেতারা দেশকে লুট করতে ব্যস্ত। আর আমাদের মত পলাতক ভারতীয়রা বিদেশের আরামের জীবন কাটিয়ে, ইংরিজিতে লোককে লেকচার দিয়ে বেড়াচ্ছি রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে।

তবে যারা দেশে আছেন, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, তারা যে কিছু বৃহত কর্ম করে উল্টে দিচ্ছেন তাও না। তবে মনে হয় সেখানে হয়তো, সাধাসিধে লকোকেদের মধ্যেই সই, বাংলা লেখাটা এখনও অল্পবিস্তর প্রচলিত আছে।

সুতরাং - আমার আদি প্রশ্নটা ঘুরেফিরে আসছে - কিন্তু জবাব পাচ্ছি না - রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা বা সমাজ, বা মানবধর্মচিন্তা নিয়ে ইংরিজিতে লিখে কি ঘোড়ার ডিম হবে?

রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে কিরকম শিক্ষা ব্যবস্থা শুরু করতে চেয়েছিলেন তা দেখতে গেলে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তার ক্রমবিকাশ, ও চারদিকের রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিবৃত্তের ভটনাবলী এবং রবীন্দ্রনাথের মনে তার প্রভাবও জানতে হয়। কিকরে গোঁড়া হিন্দু মতভাবাপন্য ব্রহ্মবিদ্যালয় পরিণত হ’ল ধর্মনিরেপক্ষ আধ্যাত্তিকতা বিকাশের সঙ্গে প্রকৃতিপরিচয়, সঙ্গীত কলা চর্চা, পল্লী উন্নয়ন, পূর্বের ্চীন-জাপানের সঙ্গে সালস্কৃতিক যোগস্থাপন ও  মানবধর্মবিকাশের এক বৃহত কর্মযোজ্ঞস্থল - সেটা বোঝার মত বিষয়।

যাঃ অনেক লিখেছি - ঘুম পাচ্ছে এখন
টা টা

Monday, August 1, 2011

An invitation to the new administration of Visva-Bharati University


Monday, 1 August, 2011
(This is a translation of the original, composed in Bengali on the 30th of July 2011. The translation has been made on request from Mr Tan Lee and Ms Leena Chatterjee of Delta, BC, Canada)

My unfinished sketch of Singha Sadan
We hear that the last Vice Chancellor has left the University on completion of his contractual term. Is the time ripe now for us to join hands with the new administration towards some constructive work towards its regeneration? We have further heard that the task of selecting the new vice chancellor has moved to an advanced stage, that the selection committee has whittled the list down to a few and forward its recommendations to the office of the Prime Minister last Saturday. Media is rife with speculative snippets. Three names are being aired, Sri Udaya Narayan Singh, Ms Piyali Palit and Ms Surabhi Bannerjee.
Till the new vice chancellor is appointed, the responsibility of running the University rests with Dr. Udaya Narayan Singh. I was mulling over the ideas of if the new ambience might be conducive for us to exchange views and join hands with the University administration in some good work.
I do not know Ms Bannerjee, but know the other two persons. We believe both are good persons and would be good for the University. The question now is - those of us that have been watching Santiniketan from afar, and believe in the relevance and timelessness of Rabindranath’s efforts towards building an ideal educational environment, those of us who were willing to expend effort and labor within our means to help sustain the institution, those of us who might have offered to help only to get their fingers burnt and have since withdrawn, will the new administration be willing to re-engage with them and be interested to hear their views ?
My guess is - the new administration will. Confucius has already said long ago, that all things must and will change. That is about the only unchanging theory and fact in this world. Besides, Rabindranath has gone one up on that - mentioning that, whether change comes of not, and whether others agree with you or not, you must follow your inner compass and walk alone if need be.
Anyhow, if we invite the new administration for a meeting, and if it agrees, then how do we proceed further from there ?
I am jotting here whatever comes to mind first. This list does not claim to be the best or the final one, but simply jotting down what came to the mind of one person, myself, to follow up on my thoughts. I look forward to correcting and completing it with others input and assistance.
  1. First task might be to think through what should be the broad agenda for the initial kick off meeting. Perhaps we should prepare a very brief list of what our wish and expectations are, and invite the University to likewise let us know what it wishes from us.
  2. Who should join the meeting from our end? This is an important task. For example, Alumni association should represent the alumni, per UGC rules. Also, Asramik Sangha should represent the Asramiks, per system put in place by Tagore himself. There is reason to believe that it is time these two be merged, but that is not likely to happen in a day. So, perhaps both bodies should be present. Besides, there may be ex-students and well wishers outside of the leaders of these bodies that the University wishes to listen to as well. So there might be need for independents to join in as well.
  3. How many should be in the meeting? If there are too many, it generates merely noise and nothing much more. Besides, I have had the opportunity to be present in a few meetings with regard to the University and ex-students. My feeling is that the ability of the ex-student body in transforming decisions from a meeting into real work on the ground is rather poor. We like to talk, but lack vision or ability, and are mostly capable of implementing anything. So, it is possible that the team will be top heavy right from the start, and will run aground from the get go. In fact, this has been the most consistent element in our history, when it comes to organizing ability of ourselves, the ex-students.
  4. To maintain continuity, it may be worthwhile to chalk out a time table for annual or bi-annual meetings.
  5. Before we can offer advise to the University, it may be worthwhile to first learn the facts from the ground up that the University is obliged to deal with on a day to day basis, for example what are the issues in dealing with UGC and the Government, or with the Teachers association, workers union, student association etc. Only when we learn enough can our advise be of any value or relevance. Having said that, we still could not avoid jotting down some of the negative issues of the University as perceived from outside, and I have takent he liberty to pass my comment here. These may be removed or amended through more input from others.
  6. Rural reconstruction is not just the area of involvement for Sriniketan. It is a collective responsibility of the entire University. One of the key reason for existence of this University is to improve the stock of the villages, and remove the economic imbalance between the urban and the rural sphere. It may do more in raising consciousness in universalism, but it may not do less.
  7. There are reports of a disconnect between departments. Cultural functions organized by one does not benefit from contribution of other departments in singing, dancing, playing of musical instruments etc. This has to be corrected. All efforts will have the spirit of joint efforts with participation of the entire University, including the ex-students where applicable.
  8. Teachers and workers of the University cannot say their duty is only to take class and go home. If they do not feel it in their duty to attend morning prayers to evening sports grounds to Sahitya Sabha or engage in rural reconstruction tasks, then such teachers are to be deemed unsuitable for serving in Visva-Bharati. If students say their interest is only to study their specific subjects and nothing else, then such students are also to be deemed not suitable for education in Visva-Bharati.
  9. The university is not here to be a fall back job offering factory for children of the workers and teachers of the University. The atmosphere has to be changed such that students from outside, including abroad, are eager to come and enroll, and be happy and grateful to be here. If there are built in resistance and roadblocks - bold actions will be needed to have such obstacles removed
  10. The University will need to be greatly downsized, if necessary by closing down or trimming unproductive, wasteful departments.
  11. The University will not be used as breeding ground for politics. Nepotism needs to be stopped.
  12. Many of us have spent a lot of time passing judgment on others. Time has come to judge ourselves in self assessment. Let the administration judge itself and prepare a list of its short comings. Let the teachers do that about themselves. Let the workers and the students likewise do the same. Let us, the ex-students make a list of our own failings. My guess is that the list for the ex-students would be the longest, but we need to check that. Once we acknowledge our own failings and endeavor to correct them, we can perhaps earn the right to advise others on their failings.
  13. It has been reported that the administration moves en-mass to Kolkata for its meetings, instead of conducting them in Santiniketan. We need to ask why this is so. Perhaps it is time for the people to re-learn frugality and fiscal discipline. University should refrain from wastage of funds and resources. If a chance of venue is desired for their internal meetings on occasion, then considerations may be given to Sriniketan, Binoy Bhavan, Surul, Taltore, Bandhgora, Shyambati, Sien-danga and similar nearby locations. Before the meeting, the attendees may engage in conducting a tour of the village and see first hand on the condition of the people there and how effective the Universities efforts has been towards addressing their issues. Such practices are to be encouraged.
  14. Annual audit of the University will use the trend of self sufficiency and socio-economic improvement of the villages around Santiniketan as one of its yardsticks for measuring Visva-Bharati’s ability to fulfill its task. The audit guideline may therefore have to be redesigned too.
  15. It may well be that the University will not be allowed to follow some of these guidelines even if the people wish to do so, because of restrictions imposed on it by UGC or the Govt of India, stemming from a standardization of rules for Governing of Universities. If such is the case, the University along with the Ex-students, well wishers and the civic body will have to campaign and lobby for the Government to change its tules to recognize the uniqueness of Visva-Bharati University. The local member of parliament and legislative assembly may have to be met with and lobbied. All these are somewhere down the line, and only after the University and the well wishers have done their own part to the fullest. We cannot, or should not, demand sops from the Government without meeting them half way.
Instead of writing more, perhaps this list could be forwarded to Dr. Udaya Narayan Singh and Dr. Piyali Palit and others who are in the list for the Vice Chancellors post. Any thoughts on that?
I did ask a few during a global conference call two days ago, for people to consider jotting down their own thoughts and passing on, so the above list, can be amended, corrected and made more acceptable, before moving on.

I look forward to your comments. Please consider clicking the link below and leave your comments. 
I hope Leena di will be satisfied with this hurried translation.
Santanu Mitra