Search This Blog

Thursday, August 4, 2011

রবীন্দ্রনাথের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সমিতি চেষ্টার বিফলতা জন্য আমরা দায়ী


বৃহস্পতিবার, আগস্ট মাসের চার তারিখ, সাল ২০১১
কালীমোহনের কাজের কথা লিখতে গিয়ে ঘুরে ঘুরে চিন্তা ফিরে আসছে কেন রবীন্দ্রনাথের সমাজ প্রতিকার ও দেশোন্নতির প্রধান চেষ্টা সংশ্লিষ্ঠ বড় বড় কাজগুলি ব্যর্থ হয়।  পেশাদারী ইতিবৃত্তকাররা, যারা Historian নামে আজ স্বীকৃতি পান, তাঁরা লিখবেন রবীন্দ্রনাথ কি বৃহৎ কর্মযোজ্ঞে নেমেছিলেন, শিলাইদহ, পতিসর এবং পরে শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতনে, এই নিয়ে। অনেক লেখা হয়েছে, আরও অবশ‍্যই হবে। তার জন্য আমার মত আনাড়ি লেখকের দরকার করবে না। কিন্তু যা সম্বন্ধে হয়তো যথেষ্ট লেখা হয়নি, সেটা হল রবীন্দ্রনাথের ঔসব যুগান্তকারী অভিপ্রায় ও প্রচেষ্টা যে শান্তিনিকেতনে বিফল হয়েছে তার যথার্থ স্বীকৃতি এবং কেন বিফল হয়েছে তার সমীকরণ।
তাই, পণ্ডিতদের হাতে ইতিহাস ছেড়ে দিয়ে, ভাবছি নিজেদের চরিত্রগত ন্যুনতা, যা মনে করি এই অসাফল্যে প্রধান কারণ, তা নিয়ে আরও তদন্ত ও লেখা। একশো বছর ধরে জত্ন করে আমরা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গান ও নাটক করেছি, বক্তৃতা দিয়েছি, রচনা লিখেছি, নানা যায়গায় আমাদের উচ্চমানের সাংস্কৃতিক চেতনার প্রদর্শনী করে হাততালি কুড়িয়েছি এবং দুটো পয়সা করেছি সুযোগ মত - এবং মনে করেছি আমরা হলাম শান্তিনিকেতনের সার্থক স্নাতক। সেই আমরাই সবচেয়ে বেশি দায়ী রবীন্দ্র-প্রকল্প ব‍্যর্থতার জন‍্য।
দায়ী আমরা সবাই, বাংলা সমাজ এবং ভারতবর্ষ। কিন্তু তাদের সবার মধ্যে সর্বাধিক দায়ী হলেন তাঁরা, যাঁরা রবীন্দ্রনাথকে পড়াশোনা করেছেন, জানবার সুযোগ পেয়েছেন, এবং তাঁরই করা শান্তিনিকেতনের ছত্রছায়ায় বড় হয়েছেন বা চাকুরি জীবন কাটিয়েছেন।
আমার চিন্তা রবীন্দ্রনাথ, কালীমোহন, এলমহার্স্টকে ছেড়ে এই রবীন্দ্রচেষ্টার অপহন্তাদলের ওপর, যাঁরা রবীন্দ্রনাথ বেচে খাওয়া পেশা হিসেবে নিয়েছেন অথচ সেই রবীন্দ্রনাথেরই প্রচেষ্টাকে অপমান করে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কর্মযোজ্ঞে জল ঢেলে তাঁর মাথার ঘাম পায়ে ফেলা চেষ্টা ও সব নিজস্ব পুঁজি ঢেলে দিয়ে তৈরি বাগানকে মরুভুমিতে পরিনত করে চার দিকে বক্তৃতা দিয়ে বেড়িয়ে নাম কিনে বেড়াচ্ছেন।
আমার মনে হয় আমাদের এই সভ্যতা-ধ্বংসক অক্ষমতা ও অযত্নের বিশ্লেষণ করে বেশ কয়েকটা মহাভারত রামায়ন লেখা যায়। আমি বাল্মীকি নই, কৃত্তিবাসও নই। তা হলেও, মনে করি এবিষয়ে চিন্তা করার দরকার আছে, সত্যকে স্বীকার করলে তবেই তার থেকে এগিয়ে যাওয়া যায় এবং ত্রুটি স্বীকার করলে তবেই তার সংশোধন সম্ভব হয়। সত্যকে কবর দিয়ে কৃত্রিম রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে আর টেলিভিশনে দেখাবার জন্য মাঠে ভুয়ো ‘খোল দ্বার খোল’ যাত্রা সহকারে সস্তা নাটক করা যায় - কিন্তু তাতে রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন বৃথা হয়।
কালীমোহন ঘোষ সম্বন্ধে লিখবো ভাবছিলাম - কারণ অনেকে বলছেন। তারই মধ্যে আমাকে আসচে মাসের  World Poetry Reading দলের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের পল্লী উন্নয়নচেষ্টা সম্বন্ধে একটা বলতে হবে। এই সব নানা কারণে আমি নানা বই আবার ঘাঁটতে শুরু করি। যেমন, ধরুন - 
  1. শ্রেয়সী পত্রিকার ৭ই পৌষ ১৩৯৭, ৭ম সংখ্যা। তার সামনের পৃষ্ঠাতে মার নিজের হাতে লেখা - “তনুকে - মা। আমার বাবা কেমন ছিলেন সেটা আমি লিখেছি এখানে। তোদের জ্ঞাত করার জন্য পাঠালাম - ১.১.৯১।” বিষয় সূচীর প্রথম প্রবন্ধই হল “পিতা কালীমোহন ঘোষ”, লিখেছেন শ্রীমতি সুজাতা মিত্র। এছাড়া আছে বেশ কিছু বই ও পত্রিকা যেমন - 
  2. Centenary Volume - L.K. Elmhirst, Edited by Manjula Bose.
  3. Rural Reconstruction and Rabindranath, by Chittabrata Palit, Manimanjari Mitra, Keya Bannerjee
  4. রবীন্দ্রনাথের লেখা প্রবন্ধ - শিক্ষার হেরফের, শিক্ষাসমস্যা, জাতীয় বিদ্যালয়
  5. Introduction to Tagore, by Visva-Bharati, 1982, যাতে রবীন্দ্রনাথের স্বরচিত অনেক লেখা আছে, যেমন,‘Education for rural India’, কিন্তু ইংরিজিতে, এবং শেষের দিকে আছে একটি প্রবন্ধ -  Santiniketan and Sriniketan, লিখেছেন উমা দাসগুপ্তা।
  6. Rabindranath Tagore, a Biography - Oxford University Press লিখেছেন উমা দাসগুপ্তা।
  7. Tagore (Oxford India Series) - লিখেছেন উমা দাসগুপ্তা।
  8. Rabindranath Tagore - my life in my words - লিখেছেন উমা দাসগুপ্তা।
  9. রবীন্দ্রনাথের নিজের লেখা The religion of man
  10. রবীন্দ্রনাথের নিজের লেখা Sadhana, the Realization of life
  11. Asian Ideas of East and West - Tagore and his critics in Japan, China and India - লিখেছেন Stephen Hay.
  12. প্রশান্তকুমার পালের নয় খণ্ড রবিজীবনী
  13. Andrew Robinson ও Krishna Dutta’এর লেখা Rabindranath Tagore, The Myriad Minded Man
  14. Visva-Bharati News’এর কিছু কপি।
  15. Imperfect Encounter - Mary Lago’র লেখা
  16. তপতি দাসগুপ্তার লেখা - Social Thoughts of Rabindranath Tagore
  17. Edward Thomson’এর Rabindranath Tagore : His Life and Work
  18. অরুণ মজুমদারের লেখা - রবীন্দ্রনাঘ ও বাঙালি মধ্যবিত্ত মন
  19. ডঃ সাইফুদ্দিন চৌধুরির লেখা - পতিসরে রবীন্দ্রনাথ
  20. সুতপা ভট্টাচার্যের রবীন্দ্র-সাহিত্যে নারীমুক্তি ভাবনার ওপর লেখা - সে নহি নহি
  21.  -----  ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

উল্টে পাল্টে দেখার সময় মনে হয় - দূর ছাই, সবাই তো প্রচুর লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে। কিন্তু তাঁর প্রচেষ্টা যে আমাদের অপদার্থতার কারণে ব্যর্থ হচ্ছে সেটা তো দেখছি অধিকাংশ ক্ষেত্রে লেখক লেখিকাদের বক্তব্যের বাইরে! এমনকি, এক সূত্রের সন্ধানে’র প্রথম খণ্ডটা আবার নেড়ে চেড়ে দেখছিলাম - অন্নদাশঙ্কর রায়, তান লী দা, আমার মা, লীনা দি, ভেল্টু দা, সত্যজিত রায়, রামাচন্দ্রন, মিষ্টুনি দি, উমা দাসগুপ্তা, অমর্ত্য সেন প্রমুখের কত লেখা। লেখাগুলো যত পড়ছি আবার করে, আমার মনের ধারনাটা ততই দৃড় হচ্ছে আমার কি বিষয়ে লেখা উচিত সেই নিয়ে। 
শেষে তান লী দাকে ফোন করলাম। লীনা দি রবীন্দ্রনাথের নারীমুক্তি নিয়ে লিখবেন ও পড়বেন World Poetry Reading’এ। তাই নিয়ে জোর পড়াশোনা চলছে। তারই মধ্যে তাঁদর বাড়িতে এখন অতিথি আসবেন কিছুদিন থাকার জন্য নানা দূর শহর থেকে। তান লী দা’ও রবীন্দ্রনাথের ছোট্ট পরিচিতি লিখে ফেলেছেন - কিন্তু পরের লেখাটা - ওনার Universalism নিয়ে একটু চিন্তিত আছেন। আমি তান লী দাকে সতর্ক করেছিলাম যে রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞরা এই একটা ব্যাপারে পরিষ্কার ভাবে ব্যাখ্যা করার বদলে প্রায়ই অস্পষ্ট হেঁয়ালির মত অনেক কিছু বলেন যাতে শ্রোতাদের মনে ধাঁধা থেকে যায় এই নিয়ে। আমার অনুরোধ ছিল তিনি যেন এইটার ধাঁধাটা শ্রোতাদের মনথেকে কাটিয়ে দেন। কথাটা মনে হয় তান লী দার মনে ধরেছে, এবং এই নিয়ে নানা বই পত্র ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করেছেন।
তান লী দা আবার এক সূত্রের সন্ধানে বইটির দ্বিতীয় খণ্ড বার পরতে চান এবং আমাকে বলেছেন একটা লেখা দিতে। আজ তান লী দাকে বললুম যে এবার মনের মধ্যে এক বক্তব্যটি পাকা হচ্ছে - কিন্তু সেটা কিঞ্চিত বিতর্কমূলক হতে পারে - যাকে ইংরেজা বলে controversial । রবীব্দ্রনাথ বা শান্তিনিকেতনের স্মৃতিচারণ না করে, আমি লিখতে চাই আমাদের - মানে রবীন্দ্রনাথের পরের প্রজন্মগুলির শান্তিনিকেতনবাসীদের সর্বনাশা ব্যর্থতা,। আমরা রবীন্দ্রনাথের দেশোন্নতির ও সমাজোন্নতির বৃহত কাজগুলিকে চোখের সামনে অবহেলা করে বন্ধ হতে দিয়েছি। এই অপরাধী বোধটা আমার শেষ বয়সে এসেছে, এর আগে ভাবিইনি। কিন্তু এখন যতই ভাবছি, ততই মনে হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজগুলি তাঁর লিখিত রচনার বাইরে - এবং সেই কাজগুলি এতদিনেও অসম্পূর্ণ থেকে গেছে।সে কাজগুলোতে পুনরূজ্জীবন আনা প্রয়োজন। আমাদের অনাদরে যে শ্রোত মরুভুমিতে শুকিয়ে গেছে, তাতে আবার শ্রোত আনতে গেলে প্রথমে শ্বীকার করা দরকার যে আমরা রবীন্দ্রনাথের সত্যিকারের উত্কৃষ্ট কাজগুলোতে সাহায্য করিনি, এগিয়ে আসিনি, এবং এতে আমরা দেশের, দশের ক্ষতি করেছি। একবার গাফিলতি শ্বীকার করলে, হয়তো বা তার সুরাহাও করা সম্ভব হবে এক দিন।
মজার ব্যাপার এই যে, রবীন্দ্রনাথ যেসব কাজ নিযেই সম্পূর্ণ করে গেছেন, সেগুলি হল তাঁর সৃজনী সাহিত্য - গদ্য, পদ্য, নৃত্যনাট্য ইত্যাদি। সেগুলির সম্পূর্ণতা গুরুদেবের নিজের ক্ষমতার মধ্যে ছিল তাই নিজেই সেগুলি শেষ করে গেছেন - শুধু তার অধিকারকভাগদেয়, বা royalty, তিনি নিজের বাড়ির লোকদের না দিয়ে বিশ্ব-ভারতীকে দিয়ে জান। এর পর থেকে বিশ্ব-ভারতী সেই সব গান, নাটকের পুনরাবৃত্তি করেছে, এবং ধীরে ধীরে তার বহিরাগত জাঁকজমক বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা হারিয়েছে, এবং কেন এই গান, নাচ, নাটক, অনুষ্ঠান তৈরি করা হয়েছিল তা ভুলেছে।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রচেষ্টা তাঁর লিপিবধ্য স্থির, নিশ্চল সাহিত্য নয়, যার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ, প্রগতিশীল, চিরগতিশীল, জীবন্ত সৃষ্টি ছিল আমাদের দুর্ভাগা দেশের মলিনতা দূর করার কাজে নামা। দেশের ও সমাজের দারিদ্র, জাতি ও গোষ্টীগত অন্যায়, হীনমন্যতা ও চারিত্রিক ক্ষুদ্রতা ও আত্মপরতা - এইগুলোর মূল কারণ খোঁজা এবং তাদের নির্মূল করা। কিন্তু সেকাজ একদিনের নয় - একজন লোকেরও নয়। সেকাজ চিরকালের, এবং সবার একত্র হয়ে করার। তিনি আশা করেছিলেন যে দেশবাসীর সবাইকে যদি একথা সেখানো না যায়, অন্ততঃ বিশ্ব-ভারতীর শিক্ষক, কর্মী, ছাত্ররা সে শিক্ষা পাবে এবং আসেপাসের কিছু গ্রামে অন্ততঃ প্রগতির হাওয়া বইবে, যা হয়তো বা ভবিস্যতকালে ছড়াতে পারবে আরও বৃহত পরিমণ্ডলে।
রবীন্দ্রনাথ দেখেছেন বাঙালি সহুরে মধ্যবিত্তদের গ্রামবাসীদের নিচুপদে ভাবা এবং জাতিগত ঔদ্ধত্ববোধ, চেষ্টা করেছেন তা থেকে শান্তিনিকেতনের লোকদের মুক্ত রাখতে এবং হতাশা প্রকাশ করেছেন নানা লেখায়। তিনি স্নাতকদের কাছ থেকে কি আশা করেছেন তা লিখেও গেছেন। অথচ, সেই নিয়ে প্রাক্তনীদের বিশেষ মাথাব্যথা দেখিনি। রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ফলদায়ক, উত্পাদনক্ষম প্রচেষ্টা যা সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সবার হাতলাগানো সামাজিক  কর্মসূচী হওয়া  উচিত ছিল, তাকে আমরা বিনষ্ট করেছি। এখানে আমাদের নিজেকে কাজ করতে হবে, ছোটলোকদের সঙ্গে মিশতে হবে, অন্যের সুবিধার জন্য স্রম দিতে হবে, এবং তা আমরা করতে এখনও রাজি না, দেশের জন্যই করতে রাজি না, রবীন্দ্রনাথের জন্য কেন করব?
এই চিন্তার ভিত্তিতে লিখবো ভাবছি।
তনু

1 comment:

Tonu said...

Received the following from Ms Piyali Palit.
Quote
খুবই ভালো কথা | এ প্রসঙ্গে দু চার দিক থেকে ভাববার বিষয় আছে | প্রথমতঃ, যবে থেকে শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতনের দায়িত্ব গভর্মেন্টের উপরে বর্তেছে, তখন থেকে দেখা গেছে, অর্থের চিন্তা-ও কমেছে, কর্মের চিন্তা-ও কমেছে | কারণ, সরকারী অর্থ সাহায্য অনায়াসে ঘরের দুয়ারে এসে পৌঁছিয়েছে অথচ যে কাজের উদ্দেশ্যে অর্থপ্রাপ্তি সেখানে একটা মস্ত বড় ফাঁক দেখা দিয়েছে ; তার কারণ যাদের উপর এই অর্থ ব্যবহারের দায়িত্ব ছিল বা আছে , তারা তাদের কাজে ফাঁকি দিয়েছে | এটাকে ফাঁকি বলাতে অনেকে মনোক্ষুন্ন হবে, কিন্তু এর থেকে বড় সত্য আর হয়না | তারা হয়ত ভাববে তাদের যে টুকু কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সে তো তারা সময় ধরে করে দিয়েছে, তবে ফাঁকি-টা কোথায় ? আমি বলব, ফাঁকি টা এই খানে যে তারা নিজেদের মনে চিন্তা করে দেখে নি যে, যে কাজের দায়িত্ব তারা নিয়েছে, সে কাজটা আসলে কি এবং কাদের জন্যে; এই দুটি ক্ষেত্রেই নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তিকে তারা স্বাধীন ভাবে কাজে লাগাবার চেষ্টা করেনি | যারা তাদের ওপরওয়ালা তারা-ও এক-ই পথে চলেছে | এটাকে 'ভুল' বলব, না, 'অবহেলা' বলব, না, 'স্বেচ্ছামৃত্যু' বলব ? নাকি তিনটে-ই | প্রাক্তনী - ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-কর্মী সকলকে-ই আজ এর দায়িত্ব স্বীকার করে নিতে হবে | অর্থাত ফাঁকি-টা যখন দেওয়া-ই হয়েছে, সেটা সংশোধনের দায়িত্ব-ও তাদের নিতে হবে - যদি তাদের গুরুদেবের প্রতি এতটুকু শ্রদ্ধা ও মমতা থেকে থাকে | দ্বিতীয়তঃ, শিক্ষা পল্লীসংগঠনের অপরিহার্য অঙ্গ - এটা যদি সকলের মতের অনুকুল হয় তবে ভাবতে হবে - এ শিক্ষা কাদের জন্য এবং কারা এ শিক্ষা দিতে প্রস্তুত | এ প্রসঙ্গে গুরুদেবের-ই একটি লেখা থেকে উদ্ধৃত করছি - "আমাদের স্বদেশহিতৈষীদের স্বদেশের উপর এত প্রেম যে স্বদেশের "লোকের" উপর প্রেম আর বড় অবশিষ্ট থাকেনা | এই কারণে, ইঁহারা স্বদেশের হিতসাধনে অত্যন্ত উন্মুখ, সুতরাং স্বদেশীর হিতসাধনে সময় পান না |...যদি স্বদেশপ্রেম শিক্ষা দিতে হয় তবে পিতামহের নাম উল্লেখ করিয়া সিন্ধু হইতে ব্রহ্মপুত্র বিকম্পিত করিয়া agitate করিয়া বেরাইলে হইবে না | হাতে কলমে এক-একজন করিয়া দেশীয়ের সাহায্য করিতে হইবে | যে কৃষক নাগরিক্মহাসয়ের উদ্দীপক বক্তৃতা ও জাতীয় সঙ্গীত শুনিয়া প্রথমে হাঁ করিয়াছিল, তাহার পর চোক বুজিয়া ঢুলিয়াছিল ও অবশেষে বাড়ি ফিরিয়া গিয়া স্ত্রীকে সংবাদ দিয়াছিল যে কলিকাতার বাবু সত্যপীরের গান করিতে আসিয়াছেন সেই যখন বিপদের সময় অকুলপাথারে ডুবিবার সময় দেখিবে তাহার স্বদেশীয় দক্ষিন হস্ত প্রসারণ করিয়া তাহাকে উদ্ধার করিতে আসিয়াছেন, তখন তাহার যে শিক্ষা হইবে সে শিক্ষার কোনো কালে বিনাশ নাই | ...আমাদের স্বজাতি যখন আমাদিগকে স্বজাতি বলিয়া জানে না, তখন কাহার কাছে কোন চুলায় আমরা agitate করিতে যাইব ?"(পল্লীপ্রকৃতি :রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
Unquote