Search This Blog

Saturday, June 25, 2011

রবিঠাকুর পরিচিতি


রবিঠাকুর পরিচিতি

কবিগুরু পরিচিতি - বারো পুরুষের স্মৃতি - নিয়ে এই লোকগীতি - সবারে দিলাম
রবিঠাকুরের এই পরিচিতি গান
(১)

শুন দাদা শুন দিদি শুন গ্রামবাসী
শুন শহরের বাবু শুন ভাগ চাষী
যঁার তরে অাজি হেথা এত নাম ধাম
তঁার পরিতিচি নিয়ে এই কবিগান
কবিগুরুর একাহিনী - গঁেথে এই মালাখানি - লিখেছিল কেন জানি - তনু তার নাম
কবিগুরু রবীন্দ্রের পরিচিতি গান
(২)

পিঠাভোগের জমিদার জগন্নাথ কুশারী
বিয়ে করে যশোহরে শুকদেবের বাড়ি
শুকদেব রায়চৌধুরি পিরালী ব্রাহ্মণ
তঁার কন্যা বিয়ে করে জাতিচ্যুত হন
পিরালী বিবাহ করে - সমাজের ঐ নিন্দাচারে - জগন্নাথ বিপাকে পড়ে - একি পরিনাম!
রবীন্দ্রনাথের এই পরিচিতি গান
(৩)

স্বল্পভাষী হাহুতাশি জগন্নাথ কুশারী
দেশত্যাগ করে শেষে ভিটেমাটি ছাড়ি
নরেন্দ্রপুরের পাশে বারোপাড়া গ্রামে
ঘঁাটি গেড়ে শুরু করে নতুন জীবনে
ঠাকুরবাড়ির পরিচয়, জগন্নাথে শুরু হয় - গুনীজ্ঞানী এই কয়, শুন ভাগ্যবান
ঠাকুরবাড়িকে নিয়ে এই কবিগান
(৪)

জগন্নাথের চার ছেলে শ্রোত্রিয় ব্রাহ্মণ
কুসংস্কার মুক্তিতে ঢালে প্রাণমন
তৃতীয় ছেলের নাম পুরুষোত্তম হয়
এই নাম জোড়াসঁাকোর মন্ত্রে শোনা যায়
জোড়াসঁাকো পূজোঘরে, কবি পিতা স্নান সেরে, রোজ ভোরে স্মরণ করে, দশপুরুষ নাম
পুরুষোত্তম দিয়ে শুরু সেই স্তবগান
(৫)

পুরুষোত্তমের পুত্র - নাম বলরাম
পূন্যকাজে সে সমাজে পায় যে সন্মান
পিরালী ব্রাহ্মণের গ্লানি তবু নাহি যায়
কু অাচারের অন্ধকারে - হায় হায় হায়
পূন্যকর্মে সত্যকাজে - ভাল করে সে সমাজে - থামেনাকো গঞ্জনাযে - ঈশ্বরের বিধান
সেই কাহিনীকে নিয়ে অাজি কবিগান
(৬)

বলরামের সৎপুত্র নামে হরিহর
ধনে মানে যশে গুনে যোগ্য বংশধর
তারি সন্তান রামানন্দের দুটি পু্ত্রলাভ
মহেশ্বর অার শুকদেবে ঘটেনা সদ্ভাব
ছপুরুষের বাসস্থানে - জ্ঞাতি কুলের অভিমানে - নবজীবন অন্যেশনে মহেশ  ছাড়ে গ্রাম
ঠাকুরবাড়ির ইতিহাসে এই কবিগান
(৭)

দেশত্যাগী মহেশ্বর খঁোজে নব ঘঁাটি
পুত্র পঞ্চানন সাথে দেখে সুতানুটি
তারি পাসে কলিকাতা গ্রাম গঙ্গাপাড়ে
পর্তুগীজ, অার ওলোন্দাজ সওদাগরি করে
ইংরেজেরও অাগমন - এসব দেখে পঞ্চানন, গোবিন্দপুরবাসী হন, ব্যাবসায় মন।
তিনগ্রাম মিলে হয় নগর পত্তন
(৮)
কলিকাতা, সুতানুটি, গোবিন্দপুর জুড়ে
জব চার্ণক কলিকাতা বন্দর গড়ে
মাছের ভেড়ি, সুতাবস্ত্র, বড়বাজার হাট
স্বদেশী বিদেশী মিলে কেনাবেচার পাট
সেদিনের ব্যাবসা ধরে, মাল সরবরাহ করে, পঞ্চানন উপার্জন করে ক্ষ্যাতি ধন মান
নদীপাড়ে করে নিজ শিবপ্রতিষ্ঠান।
(৯)

গ্রামবাসী ডাকতো এঁদের ঠাকুরমশাই বলে
সেই থেকে ব্যাবসায়ে ঠাকুর নাম চলে
পঞ্চানন কুশারী হল পঞ্চানন ঠাকুর
কুশারী ঠাকুরে মিলে কাহিনী সুদূর
পঞ্চাননের বংশধরই পাথুরেঘাটায় বসতবাড়ি, জোড়াসঁাকো ঠাকুরবাড়ি, করে প্রতিষ্ঠান
অারও করে কয়লাঘাটায় ঠাকুর-বাসস্থান।
(১০)

তঁাহার ছেলে জয়রাম শেখে ইংরাজি
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে হয় উচ্চপদের কাজি
তিনশো বছর অাগের খবর কলকাতা বর্ধন
তিন থেকে চল্লিশ গ্রাম বাড়ে অায়তন
পতিত পিরালী ব্রাহ্মণ, করে নাম পরিবর্তন, অর্জন করে মান ধন, ঠাকুরগোষ্ঠির নাম
সেই কথা নিয়ে অাজি এই কবিগান
(১১)

 জয়রামের দ্বিতীয় পুত্র নাম নীলমণি
ব্যবসা বানিজ্যে তিনি লাখোপতি ধনী
ফোর্ট উইলিয়ামে পাতেন নিজের বসতি
সিরাজুদ্দৌলার অাক্রমনে হয় সেথা ক্ষতি
রবার্ট ক্লাইভ অস্ত্র ধরেন, পলাসীতে যুদ্ধ করেন, সিরাজ সে যু্দ্ধে হারেন, ইতিহাস প্রমান
মিরজাফর নীলমণিকে দেন ক্ষতিপুরণ দাম
(১২)

নীলমণি করেন বাড়ি পাথুরেঘাটাতে
দিয়ে যান ভ্রাতা দর্পনারায়ণের হাতে
অাবার বানান অাটচালা মেছুয়াবাজার গ্রামে
লোকে তাকে অাজ ডাকে জোড়াসঁাকো নামে
নানাস্থানে জমিবাড়ি, উড়িষ্যাতে কালেক্টারি, ব্যবসায় কর্ণধারী, সমাজে সুজন
সেই কথা নিয়ে এই কাব্যকথন
(১৩)

নীলমণির একপুত্র শ্রী রামলোচন
পূত্রের অাশায় ভজেন বাসায় লক্ষ্মী-জনার্দন
পুত্র নাহি অাসে তবু বিধাতার নির্দেশ
ভ্রাতুস্পুত্র দত্তক নেন সাধুর উপদেশ
ভাগ্যের অদৃশ্য হাতে - বালক দ্বারকানাথে, অাসেন জোড়াসঁাকোতে - শুন ভাগ্যবান
ঠাকুরবাড়ির কথা নিয়ে এই কবিগান
(১৪)

দ্বারকানাথ যুক্ত ছিলেন শতকর্ম নিয়ে
মহাভারত লেখা যায় সে সব গল্প দিয়ে
বহুভাষা পারদর্শী বহু জ্ঞানে জ্ঞাত
সমাজোন্নতি, ধর্মে প্রগতী, বানিজ্য চিন্তায় খ্যাত
নিজ জাহাজেতে চড়ে, কালাপানি পার করে, ইংলান্ডে মহারাণীর দ্বারে - পঁৌছলেন যখন
সম্বর্ধনা পান তিনি রাজার মতন
(১৫)

দ্বারকানাথের মৃত্যু হয় বাহান্নো বছরে
ধার্মিক পুত্র দেবেন্দ্রনাথ সংসারের হাল ধরে
কিছু যুবক তখনকালে খৃষ্টধর্ম নেয়
ইংরাজিকে মাতৃভাষা পরিচয় দেয়
দেবেন্দ্রনাথ সেবিচারে, তত্ববোধিনী সভা করে - হিন্দু ধর্মে কুসংস্কারের খঁোজেন সংশোধন
বাংলা স্কুলে শুরু করেন বিজ্ঞান পাঠন
(১৬)

কবিপিতা দেবেন্দ্রনাথ দেশভ্রমনে যান
ভুবনডাঙার উত্তরদিকে রাঙা মাটি পান
চারিদিকে ধু ধু প্রান্তর জনমানবহীন
ভয়াবহ মুলুক সেটা ডাকাতের অধীন
দেবেন্দ্রনাথের উপদেশে - ডাকাত সর্দার নিজে এসে - করে তঁাহার পদদেশে - অাত্মসমর্পণ
ভয় গেল - সেথা এল শান্তির নিকেতন
(১৭)

লাল কঁাকরের দেশ মহর্ষী দস্যুমুক্ত করি
ছাতিমতলার ধারে বানান শান্তিনিকেতন বাড়ি
বাৎসরিক খাজনা দিয়ে রায়পুর জমিদারে
কুড়ি বিঘা জমি নিলেন ধর্মচর্চা তরে
অাজকের শান্তিনিকেতন - সেখানে গোড়াপত্তন - দেড়শ বৎসর পুরাতন -এই পীঠস্থান
সেই কথা নিয়ে শুন এই কবিগান
(১৮)
(ভ্যানকুভার থেকে হংকং যাত্রাকালে প্লেনে লেখা ১৯.১০.২০০৯ তে)

সেসময়ে জোড়াসঁাকো ছিল জমজমাট
বাদ্য গীতি, ধর্ম, স্মৃতি, হিন্দু মেলার হাট
ছোট্ট রবি বিশ্বকবি গৃহশিক্ষা পায়
লিখে ভানুর পদাবলী দাদাদের হারায়
ইস্কুলেতে ইঁটের ঘরে, জানলা দরজা বন্ধ করে, পড়ালেখা করতে নারে - কঁাদে প্রাণ মন
বিশ্ব তাকে বাইরে ডাকে - উদার প্রাঙ্গন
(২০)

সারা সহর জুড়ে হঠাৎ ডেঙ্গুজ্বর ছড়ায়
বারো বছরের রবি পানিহাটি যায়
নিদীপাড়ে বাগানবাড়ি, গ্রাম, উপবন
এই প্রথম দেখে রবি পল্লীর জীবন
পৈতে করে সমাপন, ন্যাড়া রবি ভাবপ্রবণ, স্কুলের যেতে নাহি মন, চিন্তার কারন
পিতা ভাবেন নিয়ে যাবেন হিমালয় ভ্রমণ
(২১)

যাত্রা শুরু করে তারা বোলপুরে থামে
পাল্কি চেপে শান্তিনিকেতন ছাতিমতলায় নামে
রবি পায় খোলা প্রান্তর, প্রকৃতি দর্শন
উন্মুক্ত অালোতে দৈব প্রেরণার ইন্ধন
পিতৃদেবের ব্যবস্থাতে, প্রকৃতির এই মোলাকাতে, বালক রবির চেতনাতে, সত্যানুসন্ধান
সেই কথা নিয়ে অাজ এই কবিগান
(২২)

এই ভাবে ক্রমে রবির প্রতিভার উত্থান
সারা পৃথিবীতে হয় খ্যাতি নাম ধাম
শ্রেষ্ঠ কবি স্বীকৃতিতে নোবেল পুরস্কার
স্বদেশে বিদেশে লোকে করে নমস্কার
মানববিকাশ অন্বেষণে, নবযুগের সংগঠনে, করেন শান্তিনিকেতনে, খুঁটিপত্তন
সেই থেকে হল এই শান্তিনিকেতন
(২২)

রবি পুত্র রথীন্দ্রনাথ পাননি সন্তান
দ্বাদশ পুরুষের গল্পে পর্যবসান
শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ উপহার
দিয়ে গেলেন সকলকে তা রক্ষা করার ভার
বারো পুরুষের কৃত, রবীন্দ্রনাথ সংগঠিত, সারা বিশ্ব সমাদ্রিত, এই পূন্যস্থান
প্রনাম জানিয়ে শেষ এই কবিগান
(২৩)

No comments: